আলী হোসেন, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে নির্মিত দোকানঘর ও মার্কেট উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। জেলার সদর উপজেলার জকসিন বাজার থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৬টি বাজারে গত এক সপ্তাহের অভিযানে অন্ততপক্ষে দেড়শতাধিক দোকানঘর এবং বহুতল বিশিষ্ট ৫টি মার্কেট ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে হঠাৎ প্রশাসনের এই উচ্ছেদ অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীরা। গত রোববার (১২ জুন) থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সর্বশেষ চন্দ্রগঞ্জ বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং চন্দ্রগঞ্জে আরো দুইদিন অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে।
উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (সদর-ভূমি) সমর কান্তি বসাক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুর রহিম, সার্ভেয়ার নাজমুল হোসেনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি ভাড়া দিয়ে ভোগ দখল করে আসছে একটি স্বার্থান্বেসী মহল। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রশাসনের সহযোগীতায় অভিযান পরিচালনা করে এসব সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বই ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক, ওষুধ ব্যবসায়ী দিপু, ফার্ণিসার ব্যবসায়ী দেলোয়ার, মুদি ব্যবসায়ী মোশারেফ হোসেন ও আব্দুল মতিন, শাহজকি মার্কেটের মালিক সাহাবুদ্দিনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, সড়ক প্রশ্বস্ত করার জন্য সরকারের জায়গার প্রয়োজনে আমাদের সীমানা নির্ধারণ করে দিলে আমরা নিজেরাই তা সরিয়ে নিতাম। কিন্তু হঠাৎ অভিযান পরিচালনায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেন, দোকানঘর বা মার্কেটের মালিকদের চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে বিশাল অংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, ঈদের পরে অভিযান চালালে প্রশাসন বা সরকারের কী এমন ক্ষতি হত বলে এসব ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন করেন।
উচ্ছেদ অভিযানে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দখল থেকে উদ্ধার হয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে এমন অভিযান বাস্তবায়নের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে পড়েছেন। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র এসব ব্যবসায়ীরা। অনেকের আসছে ঈদে তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের রুটি-রুজির পথ। কর্মস্থল হারিয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এ জেলার বেকারত্ব।
এ দিকে একটি মহল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করে সঠিক পথে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ব্যর্থ করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। সুযোগ সন্ধানী ওই মহলটি নিজেদের পুরনো শক্রুতা উদ্ধারের চেষ্টায় প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক। এ ব্যাপারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় পুর্নবিবেচনার জন্য জেলা প্রশাসকের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
0Share