কাজল কায়েস: কমলনগরে মেঘনার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শত শত পরিবার। প্রতিনিয়ত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। উপজেলার চর কালকিনি, সাহেবের হাট, চর লরেন্স, পাটওয়ারী হাট ও চর ফলকন ইউনিয়নের কমপক্ষে ১২ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ভাঙন।
এলাকাবাসী জানায়, ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণে ২০১৪ সালের আগস্টে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কমলনগরের এক কিলোমিটার ও রামগতির সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রামগতি অংশে প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন হওয়ায় সেখানকার মানুষ এর সুফল পাচ্ছে। কিন্তু কমলনগরে একনেকের প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কমলনগরে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হতো।
জানা গেছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের খেলা চলছে। এতে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, হাটবাজার, পুল-কালভার্ট, পাকা-আধাপাকা রাস্তা, সাইক্লোন শেল্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ অনেক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। গত তিন বছরের ভাঙনে কমলনগরের পশ্চিমাংশের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এখন উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়, কমলনগর থানা ভবন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও নির্মাণাধীন চর ফলকন ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ কয়েক কোটি টাকার স্থাপনা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ ব্যাপারে পাটওয়ারীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল আমিন রাজু জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে মেঘনার ভাঙনে তার ইউনিয়নের শত বছরের পুরনো লুধুয়া বাজার, ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়, ফলকন ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো পরিবার।
কমলনগর উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব জানান, মেঘনার ভাঙন থেকে কমলনগর উপজেলাকে রক্ষায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুই বছর আগে ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পও অনুমোদিত হয়।
কিন্তু অনুমোদিত ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় কমলনগর উপজেলা সদরের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি জানান, রামগতির মতো সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুত কাজ শুরু হলে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হাজিরহাট এলাকাটি ভাঙনের হাত থেকে বাঁচবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, ‘মেঘনার ভাঙনরোধে কমলনগরে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরুর সব প্রস্তুতি শেষের পথে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব।’
0Share