নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘূর্নিঝড় নাদার আগমেন নিম্নচাপের পরপরিই লক্ষ্মীপুরের গ্রামীণ জনপদে শীতের আগমনী বার্তার কড়া নাড়া শুরু করে। আজ ১ লা অগ্রহায়ন থেকে শীত জেকে বসার আগে তাই লেপ-তোষক তৈরির ধুম লেগেছে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে। ফলে লেপ-তোষকের দোকানে বাড়ছে বেচা-কেনা। এসব দোকানের কর্মচারীদের এখন অলস সময় কাটানোর একদম ফুরসত নেই। লক্ষ্মীপুরের ৫ টি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লাতে লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা এখন হাঁক-ডাক করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শুধু লেপ-তোষক তৈরিই নয়, শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ ও ব্যবহার্য সামগ্রীতেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। পাতলা পোশাকের পরিবর্তে অনেকেই মোটা জামার দিকে ঝুঁকছেন। তাই এখন কদর বাড়তে শুরু করেছে গরম পোশাকেরও। এ ছাড়া শীতের সময় কাঁথা, কম্বল, চাদর বা শাল, শীতের টুপি, হাতমোজা, মাফলার, জাজিম ও কার্পেটের ব্যবহার ও বিক্রি বেড়ে যায়।
ছয় ঋতুর এই দেশে শীতের আগমনী বার্তা শীতকালে হওয়ার কথা থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তা এখন ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে না। গ্রাম-বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘আশ্বিন মাস এলেই শীতের কারণে মানুষের গা শিরশির করে।’ কিন্তু এখন কার্তিক মাসের শেষ ভাগে সকাল হলেই ঘন কুয়াশা আর শীতের আমেজ দেখা যাচ্ছে। সূর্য উঠার ঘণ্টা দুই পরেই আবার বদলে যাচ্ছে প্রকৃতির এমন রূপ। তখন রোদের তাপে শীতের কুয়াশা দূর হয়ে গরমে ঘাম ঝরছে কিশোরগঞ্জ এলাকার মানুষের। সন্ধ্যা নামার পরপরই প্রায় সারারাত মাঝারি শীতের কারণে বাসা-বাড়িতে শীত নিবারণের জন্য পাতলা কাঁথা ব্যবহার শুরু হয়েছে।
তবে বেশিরভাগ মানুষই শীত নিবারণে সাধারণত নির্ভর করেন লেপ-তোষকের ওপর। এ কারণে লেপ-তোষকের কারিগরদেরও শীত আসার আগে থেকেই শুরু হয় ব্যস্ততা। প্রতিবছরের মতো এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শীতকে সামনে রেখে এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন মার্কেট এলাকা ও গলির মোড়ে গড়ে ওঠা লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতার আনাগোনা। পৌর শহরের লেপ-তোষকের মার্কেট ঘুরে কারিগরদের আগাম ব্যস্ততার দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল এই শীত এলো বলে! কারিগররা বলছেন, ক্রেতাদের এই আনাগোনা চলবে পুরো শীতজুড়ে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলার লেপ-তোষকের দোকানের প্রায় সবকটিতেই ছিল অর্ডার দিতে আসা ক্রেতাদের ভিড়। দোকানিরাও অর্ডার গ্রহণ এবং বিভিন্ন রঙ ও মানের কাপড় ও তুলা দেখাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একই দৃশ্য চোখে পড়ে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।
এ বছর লেপের দাম কেমন হবে জানতে চাইলে কমলনগরের রাসেল বেডিং এর মালিক মোঃ রাসেল বলেন, রেডিমেড লেপ কিনতে খরচ পড়বে- সিঙ্গেল লেপ দেড় হাজার টাকা, সেমি-ডবল লেপ আঠার শ’ থেকে দুই হাজার টাকা, ডবল লেপ পাওয়া যাবে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে।
এ ছাড়াও শুধু রেডিমেডই নয়, ক্রেতারা তার পছন্দমতো লেপ কারিগর দিয়ে তৈরি করিয়ে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে উনিশ শ’ থেকে আটাশ শ’ টাকার মধ্যে ক্রয় করতে পারবেন ক্রেতারা।
লক্ষ্মীপুরে শীতের প্রস্তুতি শুরু pic.twitter.com/RK6pQC6avF
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) November 15, 2016
তিনি আরও বলেন, তুলার মান ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে লেপ তৈরির খরচ। একটি ডবল লেপ বানাতে ৩ থেকে ৪ কেজি তুলা লাগে। আর লেপ বানাতে সাধারণত কার্পাস তুলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও লেপ-তোষকের ব্যবসায়ীরা আরও জানান, এ বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই লেপ-তোষক তৈরিতে খরচ বেড়ে গেছে ৩শ’ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। আর একটি লেপ বিক্রি করে প্রায় একশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত লাভ হয় তাদের।
এদিকে কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারের মা আমেনা বস্ত্র বিতানের বিক্রেতা বাতেন জানান, শীতকে কেন্দ্র করে মার্কেটে উঠেছে নানা ধরনের কম্বল। তবে আকার অনুযায়ী দাম কম-বেশি রয়েছে। এক্ষেত্রে বড় কম্বলের দাম পড়বে প্রায় আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ছোট কম্বল দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়াও শিশুদের জন্য কম্বলের দাম পড়বে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। তাছাড়াও অল্প দামের কম্বলও রয়েছে মার্কেটগুলোতে, যা তিনশ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় পাবেন ক্রেতারা।
0Share