সানা উল্লাহ সানু::অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন কৃষক। ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ার প্রাক্কালেই কৃষকরা প্রত্যাশা করছেন এবার সর্বোচ্চ ফলন ঘরে তুলবেন তারা। কৃষকদের ধারণা নভেম্বরের শুরুতে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি না হলে ফলন আরো ভাল হতো। আমনের ভালো ফলন হলেও দেশীয় প্রজাতি ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় প্রাণের সে সব জাতের জন্য অনুশোচনা ও করছেন তারা।
গত সপ্তাহ থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি,লক্ষ্মীপুর সদর এবং কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, ধান কাটার সঙ্গে কৃষক বধূরাও থেমে নেই। ধান কেটে বাড়ি আনা, ধান মাড়াই, শুকিয়ে ঘরে তোলা, এ কাজ করছেন কৃষকদের সাথে কৃষাণী ও কৃষাণ মেয়েরা।
কৃষকরা জানান এবার আমন আবাদের শুরু থেকে যথা সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এং রোগ বালাই কম হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের কৃষক মনির আহমেদ জানান, তিনি ২ একর জমিতে আমন ধান আবাদ করে সর্বোচ্চ ফলন কাটবেন বলে আশা করছেন।
একই গ্রামের মোঃ দুলাল মিয়া জানান, তিনি ১ একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের ফলন ভাল হয়েছে। ধানে চিটা নেই বললেই চলে। গত সপ্তাহের নিম্নচাপ না হলে আরো ভাল হতো।
কমলনগর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন পলাশ এবং রফিক উল্লাহ মুরাদ জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। ফলে আমনের ফলন ভালো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন জানান, জেলার ৫টি উপজেলার শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ও ব্রি ধান চাষ করেছেন। হাইব্রিড ও ব্রি ধান দেশীয় প্রজাতির তুলনায় তিনগুণ ফলন দেয় এবং সময় কম লাগে এতে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। হাইব্রিড ও ব্রি ধান চাষ বেড়ে যাওয়ায় ক্রমে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশী নানা বাহারি নামে ধান।
এদিকে কৃষকরা জানান দিন দিন নতুন নতুন জাতের আমন ধান কৃষককে উজ্জীবিত করছে। যার ফলে দেশীয় বৈচিত্র্যময় জাত গুলো ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় বিখ্যাত ধান গিগজ, লোহাচুরা, কাজল শাইল, রাজা শাইল, কার্তিক শাইল, মধুমালতি, কুটিয়া মনি, ধলামোডা, বালাম, মইশা মিরা, পাটজাত, দেশীয় পাইজামের মতো কয়েকটি ভালো জাত বিলুপ্ত হতে চলছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি এ সব জাত টিকে রাখার দাবিও তাদের।
অন্যদিকে আমনে ভালো ফলন হলেও কাটার শ্রমিক এবং মাড়াই নিয়ে আশংকায় কৃষক। কৃষকরা জানান, দিন হাজিরায় যেসব শ্রমিক কাজ করতেন, এবার তারা ২৫০ টাকার নিচে কাজ করছেন না। কোনো কোনো স্থানে তিন বেলা খাওয়াসহ ৩০০ টাকা হাজিরা পাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৭৮ হাজার ২শ ৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার ৩শ ২৩ হেক্টর। উৎপাদিত এ সকল জমি থেকে এ বছর লক্ষ্মীপুরে ১ লাখ ৮৩ হাজার ১শ ৬৫ মেঃ টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি অফিস। জেলা কৃষি সম্প্রারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবুল হোসেন দেয়া তথ্য মতে এ বছর রামগতিতে আমনের চাষ হয়েছে ২৪ হাজার হেক্টর, লক্ষ্মীপুর সদরে ২১ হাজার ৫শ ৫০, কমলনগরে ২০ হাজার ৪শ ১০, রায়পুরে ৯ হাজার এবং রামগঞ্জে ৩৩শ হেক্টর। পুরো জেলায় এবার দেশীয় ধানের চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে।
0Share