সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শনিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুর মুক্ত দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা

লক্ষ্মীপুর মুক্ত দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা

লক্ষ্মীপুর মুক্ত দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা

মহিউদ্দিন মুরাদ ॥ ৪ঠা ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ১৭টি সম্মুখযুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে হানাদার মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে রবিবার লক্ষ্মীপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড’র উদ্যোগে lakshmipur-muktjodha-sritsoudদিনব্যাপী আনন্দ র‌্যালী, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার আনোয়ারুল হক মাস্টারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার আ.স.ম মাহাতাব উদ্দিন, পৌর মেয়র এম এ তাহের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সাজ্জাদুল হাসান, মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার কাজল কান্তি দাস, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল আব্দুল মতিন, মুজিব বাহিনী ডিপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদিন, জেলা ডিপুুটি কমান্ডার নূরুজ্জামান মাস্টার, যুদ্ধাহত মফিজ উল্যা প্রমূখ। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন, সদর উপজেলা কমান্ডার মাহবুবুর রহমান মাহবুব। এর আগে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী ঢোল ডাক বাজিয়ে মুক্তযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় সামনে থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সংসদ কার্যালয় গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। জেলার ৫টি উপজেলা থেকে চার শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা এতে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ৯মাস ব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে পাক সেনারা রাজাকার আল বদর এবং এদেশেীয় দোসদের সহযোগিতায় তৎকালীন নোয়াখালীর জেলার বর্তমান লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণসহ হাজার হাজার নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও এ সব হত্যা কান্ডের বিচার পাননি অনেক পরিবার। সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের কাছে জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন লক্ষ্মীপুরে সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চলে। এ সব যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল হালীম বাসু, মনছুর আহমদ, আলী আহম্মদ (ইপিআর), আবু ছায়েদ, মেস্তাফিজুর রহমান প্রকাশ মোস্তফাসহ ৩৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওই সময়ে রাজাকারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, রাজাকার কমান্ডার সফিক উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, লুৎফুর রহমান প্রকাশ লুতু কমান্ডার, হারিছ মিয়া এবং মওলানা আব্দুল হাই। এদের মধ্যে মওলানা আজো পলাতক অবস্থায় জীবিত রয়েছে। এ সব রাজাকার এবং তাদের দোসদের সহযোগিতা নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী আরো নাম জানা অজানা কয়েক হাজার মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। লুটপাটসহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, মুক্তিকামী মানুষদের হাজার হাজার ঘরবাড়ী। পরবর্তীতে ৪ ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও প্রয়াত সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হন। প্রত্যেকটি দলে ৮/১০ জন করে দল গঠন করে বিভক্ত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়িস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালান দুঃসাহসিক এ সব মুক্তিযোদ্ধারা। অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ৭০/৮০জন সশ¯্র রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন। সেদিনই বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনী মুক্ত করেন লক্ষ্মীপুরকে। ”জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের “লাল সবুজের পতাকা”। যুদ্ধকালিন সময়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব সাক্ষী হয়ে আছে, জেলা শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর, সারের গোডাউনে পরিত্যাক্ত টর্চারসেল, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাদাম ব্রীজ বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ, বাসু-বাজার গনকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুরে গণ কবর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি। এ ছাড়া নানান স্থানে আরো অনেক বদ্যভূমি রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আজো ওই সব বদ্যভমি সংরক্ষিত হয়নি।

তবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে জানাানো হয়েছে, কেন্দ্রিয় দপ্তরে ওই সব তালিকা পাঠানো হয়েছে।

মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও ’৭১ এর এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার পাননি লক্ষ্মীপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। এ ধরণের এক পরিবার রয়েছে, লক্ষ্মীপুরের মজুপুর এলাকায়। নিজের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কারনে পরিবারের ৬ সদস্যকে হত্যা, ৪ জনকে পঙ্গু ও বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হলেও এখনো বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন, ভুক্তভোগী শহীদ পরিবারের সদস্য দ্বীন মোহাম্মদ। বর্তমান সরকারের কাছে প্রিয়জনকে হত্যার বিচার দাবী করে তিনি জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানান। অভিযোগ করে তিনি জানান, তৎকালের কুখ্যাত খুনি মওলানা আব্দুল হাই আজো পলাতক রয়েছে। পাক দোসরদের সাথে নিয়ে পালিয়ে যাবার কালে ফজরের নামাজের সময় যখন মানুষ নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সেই মুহুর্তে লক্ষ্মীপুরের অন্তঃত ত্রিশজন মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে মওলানা আব্দুল হাই। পরে গা ডাকা দেয়। ১৯৯৯ সালে সেই রাজাকার কলামে দৈনিক জনকন্ঠে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয় ফলাও করে।

বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপেক্ষের সরকার সেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে অদ্যাবধি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। একই দাবী জানান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উল্যা, তোফায়েল আহম্মদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড আনোয়ারুল হক মাস্টার। যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল মতিন ও মুজিব বাহিনী যুদ্ধকালীন বাহিনী ডিপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদিন বলেন, এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা এখনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলো সরকারের অনেক সুযোগ সুবিদা বঞ্চিত। তিনি তাদেরকে সবাইকে পূনর্বাসনের দাবী জানান। একই সঙ্গে কুখ্যাত খুনিদের বিচার দাবী তোলেন সকল মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জাানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দাবীদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। মহান স্বাধীণতার মহা নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে অপর খুনিদের খুঁজে বের করে ফাঁসি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের কাছে জোর দাবী বীর মুক্তিযোদ্ধাগন।

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের গন্ধব্যপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারি

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ করলো কোডেক

উপকূলীয় অঞ্চলে শাক-সবজির বীজ বিতরণ করলো কোডেক

সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র আঘাত করতে পারে : এ্যানি

উপকূলের ক্ষতিগ্রস্থ ৩ হাজার কৃষক পেল প্রণোদনা, রবি প্রণোদনা পাচ্ছে আরো ৪ হাজার ৩৭৫জন কৃষক

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com