লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর স্পেশাল: উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। মেঘনাপাড়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা। দীর্ঘ চার দশক ধরে ভাঙছে এ জনপদ। বিলীন হয়ে গেছে ফসলী জমি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা। ছিন্ন হয়েছে পারিবারিক ও সমাজিক বন্ধন। নিস্ব হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
তবুও যেনো রক্ষা নেই; ভাঙনের মুখে পড়ে পুরো কমলনগর উপজেলা এবং রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্স, আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, পৌর আলেকজান্ডার শহর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বহু সরকারি-বেসকারি স্থাপনা। এমন পরিস্থিতিতে হতাশা ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। ঠিক তখনি ভাঙন রোধে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। ফিরে আসে স্বস্তি। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে মানুষ।
২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে কাজের উদ্ধোধন করেন লক্ষ্মীপুর-৪ (কমলনগর-রামগতি) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন।ওই বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলা এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প নামে এক হাজার ৩শ ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)র ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট তারিখের বৈঠকে প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ১শ ৯৮ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দকৃত টাকায় রামগতিতে এক কিলোমিটার, আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার এবং কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিলো। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার কাজ বাস্তবায়ন করে। ৬ লাখ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয় নদীতে। দেয়া হয় ব্লক। এভাবেই তৈরী হয় ভাঙন রোধের বাঁধ। যে কারণে ওই এলাকায় নদী ভাঙন প্রতিরোধ হয়েছে।
কিন্তু একই সময়ে বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগর উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণকাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ‘ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পান। সে অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য কয়েক মাস ধরে মেঘনার তীরে বালু, জিও ব্যাগ ও পাথর মজুদ করে রাখলেও দীর্ঘ দিন বাঁধ নির্মাণকাজ না করায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে তীরে মজুদ রাখা ওইসব মালামাল এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়। ফলে বাঁধ নির্মাণকাজে অনিশ্চিয়তা দেখা দেওয়ায় কমলনগর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ২০ কিমি এলাকা জুড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
অবশেষে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর মেঘনার ভাঙ্গন রোধের ১ কিমি বাধঁ নির্মাণ উদ্বোধন করেন।সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ওই কাজ বাস্তবায়ন করছেন। যেটি এখনো চলমান।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙন রোধে প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৭ কি.মি. বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থে ৫.৫ কি.মি. বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের বরাদ্দের পেতে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
0Share