নিজস্ব প্রতিনিধি: চৈত্রের দক্ষিণা বাতাসের তীব্রতার সাথে সাথে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে মেঘনার ভাঙন আবার শুরু হয়েছে। রামগতিউপজেলার দুটি ইউনিয়নে মেঘনা নদীর ভাঙনে গত দুই সপ্তাহে ৫০টির বেশি বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে দুটি ইউনিয়নে আরও শতাধিক বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রামগতির চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের উত্তর সেবাগ্রাম, আসলপাড়া, বাংলাবাজার, মেস্তরীপাড়া ও বালুর চর এবং চরআলগী ইউনিয়নের উসখালী, মধ্য চরআলগী ও দক্ষিণ চরআলগী , কমলনগরের চরকালকিনি, চর ফলকন, লুধুয়া এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নদীর পূর্ব তীরের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের আসলপাড়া গ্রামের লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উকিলবাড়ির কবির হোসেন তাঁর বসতঘরটি সরিয়ে নিচ্ছেন। এ বাড়ির কাঞ্চন মাঝি, সালাউদ্দিন বেপারি, আহামদ উল্লাহ ও নুরুল ইসলামের বসতঘরও ভাঙা হচ্ছে। কবির বলেন, বাড়ির বাগান আগেই বিলীন হয়েছে। এখন নদীর ভাঙন ঘরভিটা ছুঁয়েছে। প্রচণ্ড বাতাস আর উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে কয়েক দিনের মধ্যেই বসতঘর নদীতে ধসে পড়তে পারে। এ গ্রামের মুরাদবাড়ির ৫টি ও পাটারিবাড়ির ৭টি বসতভিটাও ভাঙনের মুখে রয়েছে। এ ঘরগুলোও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, বাজারের দক্ষিণ অংশের ১০টি দোকান ভেঙে গেছে। আরও শতাধিক দোকান ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন। চর আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ঝোড়ো বাতাস আর উত্তাল ঢেউয়ের কারণে গত দুই সপ্তাহে আসলপাড়া লঞ্চঘাট থেকে বালুর চর জনতাবাজার স্লুইস গেইট পর্যন্ত মেঘনার ভাঙন তীব্র। বাংলাবাজার এলাকার ১৫টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। মেস্তরীপাড়ার আনোয়ার উল্লাহ শিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগেছপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালুর চরের জনতাবাজার স্লুইস গেইট ভাঙনের মুখে রয়েছে। এ বিষয়ে চর আলেকজান্ডার ইউপির চেয়ারম্যান আহামদ উল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, পাঁচটি গ্রামে ভাঙন তীব্র। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বর্ষার মধ্যে পাঁচটি গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজন বিভিন্ন সময়ে ভাঙনকবলিত এলাকা দেখে গেছেন। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য তাঁদের কাছে দাবিও জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অন্যদিকে চরআলগী ইউনিয়নের উসখালী এলাকার পূর্ব চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পড়েছে। মধ্য চরআলগী গ্রামের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন ও কারিমুল হক বলেন, উসখালী থেকে উত্তর সেবাগ্রাম পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় মেঘনার ভাঙন বেড়েছে। এতে তাঁদের বসতভিটাসহ এলাকার আরও ১০টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। তবে দুই ইউনিয়নের মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কোনো উদ্যোগ নেই পাউবোর। এ বিষয়ে পাউবোর লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ‘নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আওতায় ওই দুই ইউনিয়নে নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লকের বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
0Share