লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার নামে জমজমাট লটারী বাণিজ্য চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মেলার অনুমতি নিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছেন। সদর উপজেলার দত্তপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত ২৬ এপ্রিল এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। মোটর সাইকেলসহ লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিয়ে প্রতিটি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আয়োজকদের প্রতারণার জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষ।
এদিকে মঙ্গলবার (২ মে) রাতে জেলার রামগঞ্জ পৌর শিশু পার্কে বৈশাখী মেলায় জুয়া, লটারি ও অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করায় উত্তেজিত লোকজন হামলা চালায়। এ সময় মেলার আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রুহুল আমিন ও জেলা পরিষদের সদস্য সৈকত মাহমুদ সামছু পুলিশ পাহারায় ২০ দিন ব্যাপী মেলার নামে নৈরাজ্য চালিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অন্যদিকে রায়পুর প্রস্তাবিত পৌর শিশু পার্কে আয়োজিত মেলার প্রবেশ মূল্যের ওপর টিকেট বিক্রি করার সময় সোমবার ( ১ মে) থানা পুলিশ দুইটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ দুই চালককে আটক করে। পরে একই দিন পৌরসভার মেয়র ইসমাইল খোকন পৌরসভা এলাকায় মেলার নামে লটারি ও জুয়া চলবে না জানিয়ে শহরে মাইকিং করিয়ে দেয়। তবে মাসব্যাপী অনুমতি থাকলেও রায়পুরে মেলাটি জমে উঠেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও পিকআপভ্যানসহ অর্ধশতাধিক যানবাহন লটারির টিকেট বিক্রিতে বেড়িয়ে পড়ে। চন্দ্রগঞ্জ থানা ও নোয়াখালীর চাটখিলের একাংশ এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত মাইকিং করে টিকেট বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ৫-৬ লাখ টাকার লটারি বাণিজ্য হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়।
শ্রীরামপুর, দত্তপাড়া, সৈয়দপুর ও উত্তর জয়পুর গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, মেলার কারনে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা ছেড়ে গভীর রাত পর্যন্ত মাঠে অবস্থান করে। মাঠ ও আশপাশ এলাকায় বখাটেরা মাদক সেবন করে মাতলামি করে। উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে গ্রামে-গ্রামে টিকেট বিক্রি করা হয়। টিকেট ক্রয়ের টাকা সংগ্রহ করতে অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোর-যুবকরা। সম্প্রতি দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাশের হাফিজ উল্যা মেম্বার ও খলিলের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এসময় চোরের দল মূল্যবান মালমাল নিয়ে যায়। এছাড়া গত সোমবার (১ মে) চাটখিলের ধর্মপুর গ্রামে খোরশেদ (১০) ও কামাল (৬) মেলাতে এসে একটি ধারালো চুরি নিয়ে দত্তপাড়া গ্রামের শান্তকে (৬) বাহিরে নিয়ে যায়। পরে তাকে চুরির ভয় দেখিয়ে কানে থাকা স্বর্ণ নিয়ে যায়। তারা স্বর্ণটি বাজারে বিক্রি করতে গেলে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে।
দত্তপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ টি এম কামাল উদ্দিন বলেন, প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে, আমাদের করার কিছু আছে। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকায় কয়েকটি চুরি-ছিনতাইসহ আইন-শৃঙ্গলা অবনতি ঘটছে। গভীর রাত পর্যন্ত শত-শত শিশু, নারী-পুরুষ মাঠে ভিড় জমায়।
দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আহছানুল কবির রিপন বলেন, জমজমাটভাবে মেলা চলছে। এখানে লটারি বিক্রির অনুমতি নেই-তা সত্য। কিন্তু সারা দেশেই তো মেলাতে লটারি বিক্রি। মেলার কারণে তো এলাকায় আইন-শৃঙ্গলা অবনতি হচ্ছে না।
দত্তপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, আয়োজকরা আমাকে জানায়নি। দত্তপাড়া সন্ত্রাস কবলিত এলাকা। সেখানে প্রশাসন কিভাবে মেলার অনুমতি দিল, তা বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, মেলার নামে কোন অনিয়ম হলে খতিয়ে দেখা হবে।
0Share