নিজস্ব প্রতিবেদক, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতি, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর এবং রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরকার ঘোষিত টোল বা খাজনা আদায়ের নিয়ম অমান্য করে ইজারাদারদের ইচ্ছামতো টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ক্রেতা বিক্রেতাদের সাথে আলাপের পর লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের বিভিন্ন উপজেলা প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে ফসল উৎপাদন কারী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
এতে প্রায় সময় বিভিন্ন হাট বাজারে কৃষকদের সাথে ইজাদারদের বাকবিতন্ডা হচ্ছে। অনেক বাজারে প্রভাবশালী ইজাদারগণ কৃষকদের গায়ে হাতও তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রতিবেদন তৈরির কালে (১-৬ জুন) কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, চর লরেঞ্চ, হাজিরহাট, করুণানগর, সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, দাসেরহাট, দালালবাজার, মজুচৌধুরীর হাট পোদ্দারবাজার, রামগঞ্জ উপজেলার পানিওয়ালা বাজার, দল্টা বাজার, রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ বাজার, মীরগঞ্জ বাজার, হাজীমারা বাজার, রামগতি উপজেলার রামগতি বাজার, বিবিরহাট বাজার রামদয়াল বাজার এবং আলেকজান্ডারের মতো বড় বাজারে ইজাদারদের পক্ষ থেকে নতুন বছরে টোল আদায়ের রেট সম্বলিত কোন সাইন বোর্ড বাজারে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় প্রতি বাংলা বছরের শুরুতে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারের ইজারা গ্রহন করে ইজারাদারগণ। হাট-বাজারের মধ্যে রয়েছে মাছ বাজার, তরকারী বাজার, কৃষি বাজার এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রাবিরতি ইত্যাদি।
সরকারের ইজারা নীতিমালা অনুসারে কোন ইজাড়াদার ওই বাজার সাব ইজারা দিলে তার মূল বাজারের ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। সরকারের এই নিয়ম মেনে ইজারাদাররা দলিলে স্বাক্ষর ও করে থাকেন।
লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার প্রায় প্রতি হাটবাজারে সরকারের এ নীতি অমান্য করে প্রতিটি হাট বাজার সাব ইজারা হচ্ছে। আবার জেলার প্রতিটি হাটবাজার রাজনৈতিক ভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় বলেও জানা যায়। পরে মুল ইজারাদারগণ প্রতিটি বাজার টুকরো টুকরো করে একাধিক ইজারাদারদের কাছে বিক্রি করে। শেষে ওই এসব সাব ইজারাদারগণ ইচ্ছা মতো টোল বা খাজনা আদায় করে থাকেন।
জানা যায়, সরকারের ঘোষিত ৩৭টি পণ্যের মধ্যে গৃহস্থের জন্য মাত্র ১১টি পণ্যের টোল বিধান থাকলেও বাকি ২৫টি পণ্যের জন্য কোন টোল প্রদান করতে হয় না। কিন্তু ইজাদারা কোন পণ্য থেকেই টোল গ্রহণ বাদ দিচ্ছে না।
গৃহস্থের যে কোন পণ্য বাজারে তুললেই সর্বনি¤œ ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হয়। সরকারী টোল আইন অনুযায়ী গৃহস্থের জন্য সর্বোচ্চ হাঁস,মুরগি , কবুতর দোকান প্রতি ৬ টাকা খাজনা দিতে হবে। বাস্তবে প্রতি হাঁস, মুরগি থেকে শতকরা ৩০Ñ৪০ টাকা খাজনা আদায় করা হয়ে থাকে।
সর্বনি¤œ টোল নারিকেল জোড়া ও দুধ প্রতি কেজি ১ টাকা। তরকারী শাকসবজির দোকান ৩ টাকা, ফল শতকরা ২ টাকা, মাছ দোকান ৩ টাকা, ধান মণ প্রতি ৫ টাকা, ডিম দোকান প্রতি ৫ টাকা, বুট-বাদাম-সয়াবিন দোকান প্রতি ৫ টাকা টোল আদায় করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।
সরকারের বাজার ইজারা আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ২ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ঘর দোকান একমাত্র মাংসের দোকান ৫০ টাকা টোল আদায়ের বিধান থাকলেও ইজাদাররা দোকান প্রতি ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা আদায় করে থাকে।
কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারে গত বৃহস্পতিবার সবজি একজন মাছ বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, তাকে একটি দোকানের জন্য ২৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে।
খাজনা আদায়কারী সাব ইজারাদার মোঃ সৈয়দ আহম্মদ বলেন, সরকারী মূল্যে খাজনা আদায় করলে আমাদের অর্ধেকও উঠবে না।
এ ছাড়া বাজার ইজাদারদের বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব থাকলেও তারা তা পালন করছে না। বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের মাসে প্রায় ১০০ টাকা আদায় করছে বণিক সমিতি। এ রকম চিত্র জেলার প্রায় সব বাজারে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইজাদারা বছরের পর বছর এ রকম ইজারা গ্রহন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা কৃষক বা ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, টোল বা খাজনা আদায়ের তালিকা প্রত্যেকটি ইজাদারের কাছে আছে। কেউ যদি এর বেশি গ্রহন করে থাকে এরকম কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় সর্বমোট ১শ ৭১ টি বাজার সরকারি ভাবে ইজারা হয়। এর মধ্যে কমলনগরে ২১টি, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৬১টি, রামগঞ্জে ৪২টি, রায়পুরে ২৭টি এবং রামগতিতে ২১ বাজার ইজারা হয়।
0Share