নিজস্ব প্রতিনিধি: ভুল চিকিৎসায় ৪ বছরের এক শিশুর হাত নষ্ট করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এমন অভিযোগ তোলেন মাহবুবুর রহমান নাঈম নামের ৪ বছর বয়সের শিশুটির বাবা নোমান পাটোয়ারী। মঙ্গলবার(১৩ জুন) শিশুটির পঙ্গু হতে যাওয়া হাতের ছবি দিয়ে সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নোমান পাটোয়ারী। স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। পোস্টটি শেয়ার করেছেন প্রায় নয় হাজার জন, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ৮ হাজার ব্যবহারকারী, মন্তব্য করেছেন প্রায় পাঁচ হাজার জন। ওই পোস্টে শিশুটির বাবা নোমান লিখেছেন, আমার ফেসবুকের সকল বন্ধুদের সাথে আজ আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জানাচ্ছি যে আমার একমাত্র ছেলে মাহবুবুর রহমান নাঈমকে গত ৩০-০৫-২০১৭ তারিখ জ্বরের কারণে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে এ ভর্তি করা হয়।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল চিকিৎসার কারণে আজ আমার ছেলেটা পঙ্গু হতে চলেছে। আমি অনেক চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে তার হাত কাটার জন্যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। স্ট্যাটাসে তিনি আরো বলেন, ঢাকার সব হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরে আমি ব্যর্থ হয়েছি। হাসপাতালের মালিকের সাথে আমার ফ্যামিলির লোকজন এ ব্যাপারে কথা বলছে কিন্তু তারা উল্টো তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে। যে জ্বরের জন্যে হাসপাতালে ভর্তি করলাম সেটার কিছুই হলো না উল্টো আমার ছেলের হাতটা পঙ্গু করে দিল। হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার তিনদিন পর যখন তারা দেখে হাতের লাগানো কেনোলায় মারাত্মক ইনফেকশন হয় এরপর তারা আমার ছেলেকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দেয়।
এ ব্যাপারে শিশুটির বাবা নোমান পাটোয়ারী বলেন, ‘জ্বরের চিকিৎসার জন্য শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলীর অধীনে জনতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নাঈমকে। চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে ছেলের হাত কালচে হয়ে যেতে থাকে। চারদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার আরও অবনতি হলে এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলে। আমার স্ত্রী না আসতে চাইলে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় তারা। পরবর্তীতে ঢাকায় এনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তারা হাত কেটে ফেলতে বলে।’ নোমান পাটোয়ারী আরো বলেন, ‘আমি ঢাকায় এনে তাকে নিয়ে অ্যাপোলো হসপিটালসহ বেশ কয়েকটি হসপিটালে নিয়ে যাই। সব জায়গায়ই ডাক্তাররা অপারেশন করে হাত কেটে ফেলতে হবে বলেছেন। ডাক্তাররা বলছেন, ক্যানোলা লাগাতে ভুল হয়েছে অথবা ক্যানোলাতে জীবাণু থাকায় বিষক্রিয়া হয়ে এমনটা হয়েছে। পপুলার হসপিটালের ডা. রওনক, কেয়ার হসপিটালের ডা.পিকে দাস, বাংলাদেশ মেডিকেলের ডা. দেবাশীষ সবাই একই কথা বলেছেন।’ শিশুটির বাবা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘মোট চারদিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেওয়া হয়। প্রথম দিন ছাড়া আর একদিনও ডাক্তার মোহাম্মদ আলী চিকিৎসা তদারকি করেননি। এরপর চিকিৎসাকালীন সময়ে ডাক্তার একদিনও হাসপাতালে আসেননি। আমরা জেনেছি ডাক্তার তখন ঢাকায় ছিলেন।’ এ ব্যাপারে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যাখ্যা জানা সম্ভব হয়নি সংশ্লিষ্ট ডা. মোহাম্মদ আলী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বক্তব্য জানতে হাসপাতালটির মালিক মো. হানিফকে ফোন দিলে রুবেল নামের হাসপাতালের এক কর্মচারী কল রিসিভ করে জানান মালিক তার কাছে মোবাইল দিয়ে অন্য কোথাও গিয়েছেন। পরে আবারও ফোন দেওয়া হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে হাসপাতালের রিসিপশনে কল দিলে রিসিপশনিস্ট জানান, ‘ডাক্তার এখন ডিউটিতে নাই।’ ডাক্তারের ফোন নাম্বার জানতে চাইলে নাম্বার দেওয়া যাবে না বলে জানান রিসিপশনিস্ট।
0Share