নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের আগে পুরো দেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুরের মুসলিম সমাজে ও যাকাতের কাপড় দেয়ার রীতি চালু আছে। সমাজের ধনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাকাত বাবত এ সকল বস্ত্র বিতরণ করে থাকেন। তবে বিগত কয়েক বছর থেকে যাকাতের কাপড়ের মান নিয়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে কাপড় গ্রহীতা ও স্থানীয় বিতরণকারীদের মাঝে।আবার যাকাতের কাপড় বিতরণের নামে গ্রহীতাদের ছবি তোলে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে উল্টো হয়রানির অভিযোগও ওঠেছে বিতরণকারীদের বিরুদ্ধে।
যাকাতের কাপড় গ্রহীতা বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও বিতরণকারীদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যাকাত দেয়ার নামে গরীবদের কে অত্যন্ত নিম্নমানের একটি কাপড় দিয়ে তাদের সাথে প্রহসন করছে। তাছাড়া যাকাত দেয়ার নামে উল্টো তাদের ছবি তুলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছেড়ে নিজেদের প্রচার করে গ্রহীতাদের সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে কথা বলে জানা যায়, এ বছর লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার যাকাতের বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ধনী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ সকল কাপড় বিতরণ করা হয়।
এর মধ্যে ৪ সংসদ সদস্য, স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন, ৪টি পৌরসভার অসচ্ছল ব্যক্তিদের মাঝে ৬০ হাজার কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহাজান কামালের পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিয়নে ৩শ কাপড়, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পক্ষে ২শ কাপড়, সদর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিয়নে ৫শ কাপড়, রামগতি এবং কমলনগরের সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিয়নে ৩শ কাপড়, বিএনপির পক্ষ থেকে ৫শ কাপড় একই ভাবে রায়পুর এবং রামগঞ্জে যাকাতের কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে।
সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও অংগ সংগঠন এ সকল বিতরণ কাজের সাথে জড়িত।
যাকাতের কাপড় গ্রহিতা কমলনগরের তোরাবগঞ্জ গ্রামের রহিম ৬০ ( আসল নাম নয়) বলেন, যাকাত গরীবের জন্য তা কম দামী, নিম্ন মানের বস্ত্র হবে এমনটা ভেবে থাকেন প্রায় সকল যাকাত দাতা। তিনি আরো বলেন, বেশীর ভাগ যাকাত দাতা সবচেয়ে কম দামের বস্ত্রটি গরীবের যাকাতের জন্য কিনে আনে। তাদের সে কাপড় ২ মাস ও টিকে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমরা তো গরিব।
সদর উপজেলার চর উভুতি গ্রামের করিমুন্নেছা (৫০) বলেন, বাঙ্গালী নারীদের কাপড় সাধারনত লম্বায় হয় ১০ বা ১২ হাত। তবে যাকাতের কাপড় বাবত তিনি যে কাপড় পেয়েছেন তা ৯ হাতেরও কম। তিনি ও বলেন এ গুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। এই কাপড়গুলো একবার ধোয়ার পর খাটো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রঙ উঠে ভিন্ন রঙে রুপ নেয় তা।
রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের সুতার গোপ্টার মিনোয়ারা (৩৫) বলেন, যাকাতের কাপড় পরে রাস্তাঘাটে ভিক্ষা করা ছাড়া আর আর কোথাও যাওয়া যায় না। তিনি ও জানান, গরীব বলেই তাদের কে এসব নিতে হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর শহরের বস্ত্র ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন রাফি বলেন, জাকাতের কাপড় বলতে আসলে কোনো বিশেষ ধরনের কাপড় নেই। দাতারা চেষ্টা করেন অধিক সংখ্যক লোকের মধ্যে কাপড় বিতরণ করতে। সে কারণেই কম দামের কাপড় ও লুঙ্গি কিনেন তারা। এ রকম শাড়ির দাম সর্বনিম্ন দাম ২৮০ টাকা এবং লুঙ্গি ১৬০ টাকা। তিনি আরো জানান এ রকম বস্ত্র বেশি দিন টিকে না।
অন্যদিকে রায়পুরে ঈদের বাজার করতে আসা গৃহিনী নাসরিন কে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি জানান, সাধারণত ৬-৭শ টাকার নিচে কোন শাড়ী তারা পরার জন্য কিনে না। যাকাতের কাপড়ের কথা বললে তিনি জানান সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের।
এ সকল অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন দাতার সাথে কথা বলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সদস্য এবং কমলনগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে বলেন, যাকাতের কাপড় অত্যন্ত নিম্নমানের তা সত্য । তিনি আরো বলেন, নিম্নমানের কারণেই তিনি এ বছর যাকাতের কাপড় বিতরণ থেকে নিজ কে বিরত রেখেছেন।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ওলামালীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল্লাহ আল ইসরাফিল বলেন, বর্তমানে যাকাতের কাপড় বিতরণের নামে ফটো সেশন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন বর্তমানে যে কাপড় বিতরণ হচ্ছে তা নজিরবিহীন নিম্নমানের।
জানা যায়, মুসলিম ধর্মীয় বিধান অনুসারে, বিত্তবান তাঁদের সম্পদের ওপর নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জাকাত দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। বছরের যে কোনো সময়েই এ কর্তব্য সম্পন্ন করা যায়। তবে রমজান মাসে দান-খয়রাতের সওয়াব বেশি বলে এ সময় টাতেই অধিকাংশ লোক জাকাত দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে অর্থের পাশাপাশি দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে ঈদের দিনে দরিদ্র মানুষ অন্তত একটি নতুন পোশাক পরতে পারেন।
0Share