সাজ্জাদুর রহমান: যথাযথভাবে ব্লক স্থাপন এবং জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করাসহ নানা অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের কারণে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা নতুন বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নদী তীর রক্ষা বাঁধের উত্তর অংশে ধস নেমে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে কমলনগরের মানুষ। বাঁধ ভেঙে নদীতে পড়ায় স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। শুরু থেকে নির্মাণ কাজে বিলম্ব, কাজে কচ্ছপ গতি, কারণে-অকারণে দফায় দফায় কাজ বন্ধ রাখা ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
ওইসব পরিস্থিতির কারণে স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে কাজ শেষ হতে না হতেই বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে পড়ছে। ভেঙে গেছে বেশ কিছু অংশ। বাঁধ ভেঙে ব্লক নদীতে পড়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ নির্মাণ কাজের প্রথম দিকে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দক্ষিণ অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করা হয়নি। যে কারণে বর্ষা শুরু হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বাঁধে ধস নেমেছে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা নতুন বাঁধে ধস pic.twitter.com/7Iu7HxxK83
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) July 4, 2017
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন আজম এ প্রতিনিধি কে বলেন, দ্রুত সময় মধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ যথাযথ উদ্যোগ না নিলে নদী তীর রক্ষা বাধাঁ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, ভালো বালু প্রাপ্তিতে অসুবিধার কারণে সামান্য কিছু অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ যথাসময়ে ডাম্পিং করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে তীব্র জোয়ারে বাঁধের ওই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৪ জুলাই) সকাল থেকে ফের জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান এজিএম মাসুদ রানা।
কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা নতুন বাঁধে ধস pic.twitter.com/hJM7IUJrJ0
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) July 4, 2017
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, ডাম্পিং না করে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধে ধস নেমেছে। নদীর ভিতরে ব্লক দিয়ে গার্ড লাইন দেওয়া হয়। ব্লকের পরে ৪০ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা কিন্তু তা না করায় বাঁধ নদীতে নেমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি দেখছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হবে।
কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা নতুন বাঁধে ধস pic.twitter.com/h9yB9EbsBc
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) July 4, 2017
২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ বরাদ্দ দিয়ে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার, রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এবং কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কথা। ২০১৫ সালের ০১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। এদিকে, একই সময়ের বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নামমাত্র কাজ শুরু হয়। নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধে অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
প্রতিবেদনটি বাংলানিউজের সৌজন্যে
0Share