নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন নদী খাল ও জলাশয় গুলো দখল আর দূষণের প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক পরিচয়ে এ সব দখল করে নিজেদের আয়ত্বে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সকল অবৈধ দখলের কারণে প্রতি বছর বর্ষায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতাসহ কৃষিকাজে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়।লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচ উপজেলার সবখাল ও জলাশয় দখল নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব ।

জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম রহতমখালী নদীসহ বিভিন্ন খাল দখল ও দূষণের কবলে পড়ে নালায় পরিণত হয়েছে। এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও ব্যবসায়িক কাজে পাইকারদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল রহতমখালী নদী। এ নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে মালপত্র আনা-নেয়া করতেন ব্যবসায়ীরা। এসব কথা এখন অতীত। একসময়ের উত্তাল এ নদী বর্তমানে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় মোট খাল, সংযোগ খালসহ ৭৮টি খাল রয়েছে।
এর মধ্যে অধিকাংশ নদী ও খাল দখলের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে। দখলদারদের কবলে পড়ে রহমতখালী নদী, জকসীন-ভূলুয়া খাল, মান্দারী-গন্ধব্যপুর খাল ও রায়পুরের ডাকাতিয়া নদীসহ ৩০-৩৫টি খাল এখন নালায় পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালীরা খালের ওপর প্রকাশ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দখলদারদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় মোট ছোট-বড় ৭৮টি নদী বা খাল রয়েছে। একসময় এ খালগুলো ছোটখাটো নদীর আকৃতিতে থাকলেও দুই দশক ধরে দখলদারদের কবলে পড়ে খালগুলো নালায় পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হলেও সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন দখলদারের সৃষ্টি হয়েছে। দখলদাররা প্রথম দিকে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে খালের ওপর ঘর তুললেও এখন দালান নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী রূপ দেয়া হচ্ছে দখল কার্যক্রমকে। বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে রয়েছে এ নিয়ে এক ধরনের সমঝোতা। খাল দখলদাররা ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ দখল কার্যক্রম। এভাবে খালগুলো দিন দিন দখল হতে থাকলে বন্যাসহ পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে, এমনটি মনে করছেন এলাকাবাসী।
দখলদারদের কবল থেকে খালগুলো দখলমুক্ত করে সংস্কারের মধ্য দিয়ে খালগুলোর অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনার দাবি করছেন স্থানীয়রা।লক্ষ্মীপুর শহরের ব্যবসায়ী রহমান জানান, রহমতখালী নদী দখলদারদের কবলে পড়ে ভরাট হওয়ায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বাসাবাড়িতে পানি ওঠে। জনগণ দুর্ভোগে পড়ে। শহরের চকবাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী নিয়াজ বলেন, ১৪-১৫ বছর আগেও এ রহমতখালী নদীর পানি অজু, গোসল, রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে ময়লা-আর্বজনা জমে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, শহরের সৌন্দর্য রক্ষার্থে রহমতখালী নদী সংস্কার ও দখলমুক্ত করা প্রয়োজন।লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী দখল হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জলাশয় ও খাল বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে জানানো হয় যে, রহমতখালী নদীসহ জেলার সব খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা তৈরি করার জন্য গত ৩ বছর আগেই সার্ভেয়ারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
( এ বিষয়ে পাঠকদের সহযোগিতা তথ্য এবং ছবি চাই। আপনাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য দিন আমাদের ফেসবুকে এসএমএস করে বা ইমেইল )
0Share