নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে নিম্মমানের বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভরে ড্রাম্পিং করার অভিযোগ উঠেছে। বাঁধ নির্মাণে যথাযথ বালু ব্যবহার না করায় নদী তীর রক্ষা বাঁধে ফের ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে কমলনগরের দুই লাখেরও বেশি মানুষের আশার আলো নিভে যাবে। বিলীন হয়ে যেতে পারে উপজেলার সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনাসহ বিস্তৃর্ণ জনপদ।
নদীতে জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা ছাড়াই বাঁধ নির্মাণ করায় সম্প্রতি কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ধস নামে। এক কিলোমিটার বাঁধের উত্তারাংশ ভেঙে পড়ে নদীতে। গত ৫ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ধস’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত কাজ শুরু করলেও নিন্মমানের কাজের কারণে স্থানীয়দের তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
সংশ্লিস্ট ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের আগে নদীতে জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীতে নিক্ষেপ (ডাম্পিং) করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অর্থ আত্মসাত করতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করে। এতে করে বাঁধ নির্মাণের তিন সপ্তাহের মাথায় ধস নামে। ফের সংস্কার শুরু করলেও তা হচ্ছে নিন্মমানের বালু দিয়ে।
সংশ্লীষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধের জন্য ২৫০ কেজি বালু ভর্তি ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৭ টি জিও ব্যাগ এবং ১৭৫ কেজির ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৩ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। একই বাঁধে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৬১ টি ব্লক ডাম্পিং এবং প্লেসিং করা হবে। তীর রক্ষা বাঁধ থেকে নদীর ভেতরে সাড়ে ৪ মিটার ব্লক ডাম্পিং এরপর ৪৫ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, নির্ধারিত ১০০এফএম বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা থাকলেও; কম মূল্যের ৫০ থেকে ৬০ এফএম বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যথাযথ বালু না দিয়ে ডাম্পিং করা জিও ব্যাগ থেকে ওই বালু বের হয়ে আসবে। যে কারণে বাঁধে ফের ধস নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত ১ কি.মি. বাঁধের শেষের দিকে প্রায় ২০০ মিটার ধসে পড়ে। বাঁধ রক্ষায় নদীতে বালু ভর্তি করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ নিম্মমানের বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে বাঁধ রক্ষা হলেও যখন তীব্র জোয়ারের হবে তখন জোয়ারের আঘাতে-আঘাতে নিন্মমানের ওই চিকন বালু ব্যাগ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাবে। তখন ফের বাধে ধস নেমে আসবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, তীর রক্ষা বাঁধের প্রায় ৮৫% কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পলি পড়ে বালু ঢাকা পড়ে। যে কারনে বালু প্রাপ্তিতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরেও যথাযথ বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ বাঁধে শতভাগ আস্থা রাখা যাবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, যথাযথ বালু প্রাপ্তিতে অনেকবার সমস্যা হয়েছে। নিন্মমানের বালু ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ডাম্পিংয়ে ৯০ এফএম এর বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে আশা করি বাঁধের কোন সমস্যা হবে না।
২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এরমধ্যে কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কথা। মোট বরাদ্দ থেকে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার, রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এবং কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ করা হবে।
২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। এদিকে, একই সময়ের বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নামেমাত্র কাজ শুরু হয়। নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধে অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবীতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
0Share