নিজস্ব প্রতিনিধি: দৈনিক জনকন্ঠ ও বেসরকারী জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল আই’র লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি এবং লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মহিউদ্দিন ভূঁইয়া মুরাদের অস্ত্রপচার সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জেলা শহরে অবস্থিত সিটি হাসপাতালে অস্ত্রপচার করেন, সিনিয়র সার্জারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা মো. রাকিবুল আহছান। এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ছিলেন, ডা. ইকবাল মাহমুদ। দীর্ঘদিন থেকে তিনি হার্নিয়ার সমস্যা বহন করে সাংবাদিকতা পেশা চালিয়ে যান। এখনো তাঁর চিকিৎসা চলছে। তবে তিনি বর্তমানে সম্পূর্ণ আশংকামুক্ত বলে হাসপাতাল এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক মুরাদের জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করেছেন। সার্বক্ষণিক তাঁর খোঁজ খবর রাখার জন্য পরিবারটি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে শীঘ্রই তিনি তাঁর পেশায় ফিরে আসবেন।
সাংবাদিক মহিউদ্দিন মুরাদ সাংবাদিকতা পেশায় তিনি বহুদিন বহুবার জেল জুলুম এবং মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। ২০০০ সালের জন নিরাপত্তা আইনের ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নীতি বহির্ভূত কাজের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করার কারণে তাঁকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা জড়িয়ে জেলে পাঠানো হয়। যা দুনিয়াব্যাপী তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছিলো। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিবিসি, ভোয়া, পিকিং, জার্মান বেতারসহ সারা বিশ্বে মুরাদের এ সংবাদ ফলাও করে প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করে। তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী আ.স.ম আব্দুর রব, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী (বর্তমানে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক) ওবায়দুল কাদের, তৎকালীন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মাহবুবুল আলম, মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সিগমা হুদা, জাতীয় মহিলা সংস্থার এ্যাডভোকেট এলিনা খান লক্ষ্মীপুর সফর করে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে মুরাদের মুক্তি দাবী করেন। তীব্র প্রতিবাদ জানান, তৎকালীন আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলস্তরের মানুষ এবং স্থানীয় সংবাদ কর্মীগন। জেলার প্রায় সকল আইনজীবি বিনা পারিশ্রমিকে মামলাটি পরিচালনা করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোটের্ও তা ফলাও করে প্রকাশিত হয়।
সেই সময়ে প্রায় সকল জাতীয় দৈনিকে তাঁকে ঘিরে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদীয় ছাড়াও প্রথম ও শেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ পাতায় অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে আইনী সহায়তা এবং ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে যাঁরা মুরাদকে সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম যাঁরা পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন, এঁদের মধ্যে রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবি এ্যাডভোকেট কামালুর রহিম, সাবেক পিপি এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক ও দৈনিক জনকন্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার কামাল উদ্দিন আহমদ, জনকন্ঠের যশোহর স্টাফ রিপোর্টার চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, সংবাদের জাকির হোসেন, আজকের কাগজের সাইফুল ইসলাম। তাঁদের সকলের রুহের মাঘফেরাত করি আমরা। আল্লাহ পাক তাঁদেরকে জান্নাতবাসী করুন। সে সময়ে যাঁরা যেভাবে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন মুরাদ এবং তাঁর পরিবার তাঁদের সকলের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
২০০০ সালের ৯ মার্চ মুরাদকে পুলিশে ডেকে নিয়ে মামলা ঠুিকয়ে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস আইনী লড়াইয়ের পর একই বছরের ৯ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচার মো. ফজলুল করিম সাংবাদিক মহিউদ্দিন মুরাদকে বেকসুর খালাস দেন। ২৪৬ দিন কারা নির্যাতন ভোগ করে নোয়াখালী কারাগার থেকে মুরাদ কারামক্ত লাভ করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ফজলুল করিম উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা তৎকালীন লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার খায়রুল বাশারকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা (তৎকালীন) ব্যক্তিগত রোষানলের কারণে মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। মামলাটি ছিলো সম্পূর্ণ জামিন অযোগ্য। মামলাটি ৯০ দিনে নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও শেষ নাগাদ বিভিন্ন কারণে প্রায় নয় মাস ২৪৬ দিন কেটে যায় রায় ঘোষনা পর্যন্ত।
শেষ পর্যন্ত সেই কালো জননিরাপত্তা আইনের অপমৃত্যু ঘটে। আইনটি বাতিল করা হয় পরবর্তী সরকারের আমলে। আইনটি করা হয়েছিলো সন্ত্রাস দমনের বিরুদ্ধে। প্রথমেই আইনটির পুলিশ অপব্যবহার শুরু করে সাংবাদিদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ২০০৫ সালে রায়পুরে বিএনপি দু’পক্ষের সংঘর্ষে ছবি তুলতে গেলে তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং ক্যামরা ভাংচুর করা হয়। একই বছরের তাঁর এবং পরিবারের ওপর রক্তাক্ত হামলা চালানো হয়। এর বাইরেও তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ সাংবাদিকতার পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। সাংবাদিকতায় তিনি ইতোমধ্যে একাধিক সন্মানজনক পদক পেয়েছেন। তাঁর বহু লেখনী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমার্ধিত হয়। এর আগে ১৯৯৩ ইং সালে মহিউদ্দিন মুরাদ দৈনিক আল আমিনের মাধ্যমে প্রথম সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু করেন। এরপর তিনি দৈনিক ভোরের কাগজ, ইটিভি, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিডিনিউজ-২৪ ডট কম, মাস লাইন মিডিয়া সেন্টার প্রকাশিত লোক সংবাদ এ কাজ করেন। আমরা তাঁর সুস্থ্যতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।
0Share