জুনাইদ আল হাবিবঃ হাসান মাহমুদ, ডাক নাম রাব্বি। লক্ষ্মীপুরের এ ছেলে এখন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে লড়ছেন অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। তার দুর্দান্ত বোলিং অ্যাকশনে ২৮ জানুয়ারি (রবিবার) নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউনে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেরা পাঁচে জায়গা দখল করেছে বাংলাদেশ। নিজের একাউন্টে যোগ করেছে ৩টি উইকেট।তার বোলিংয়ের প্রশংসা করে ভবিষ্যত স্টার লিখে #FutureStars #U19CWC টুইট করেছে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক আইসিসি। পুরো দেশবাসির সাথে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে লক্ষ্মীপুরবাসি।
ক্রিকেটার হাসান মাহমুদের বাবা-মা এবং স্থানীয় কোচ লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেনের সাথে কথা বলে ক্রিকেটে মাহমুদের বেড়ে ওঠা নিয়ে জানাচ্ছেন, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি জুনাইদ আল হাবিব।
লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের পৌর ৭নং ওয়ার্ডের বাঞ্চানগরের মমিন ভেন্ডার বাড়ির মো. ফারুকের ছেলে হাসান মাহমুদ রাব্বি। বাবা ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দু ভাই এবং তিন বোন আর বাবা মা নিয়েই তাদের সংসার।
বড় ভাই আবুল হাসান হৃদয় সিএতে পড়াশুনা করছেন অ্যামরিকান ইউনিভার্সিটিতে। বোনরা বিবাহিত। হাসান মাহমুদের ক্রিকেট খেলার শুরুর গল্প জানতে চাইলে তার বাবা বলেন, সে পড়াশুনা করতো। একদিন হঠাৎ বললো যে, আমি ক্রিকেট খেলার ওখানে (জেলা ক্রিকেট একাডেমী) ভর্তি হবো। তখন আমি রাজি হয়ে যাই। তাকে ভর্তি করিয়ে দিলাম। পরে যা চাইতো সব কিছু দিতাম। তার শখেই আমি রাজি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, হাসান মাহমুদের ক্রিকেট খেলায় হাতে খড়ি বিসিবির কোচ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা লক্ষ্মীপুরের কর্মকর্তা মো. মনির হোসেনের কাছে।
কীভাবে তার দুর্দান্ত ক্রিকেট শুরু? জানান মো. মনির হোসেন, ২০১২ সালের শেষ দিকে ওর সাথে আমার পরিচয় এবং সে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় জেলা ক্রিকেট একাডেমী ভর্তি হয়। যারা প্রকৃত খেলোয়াড়, আমরা সব সময় তাদের মুল্যয়ন করে থাকি। একজন মিডিয়াম প্রেস বোলার হিসেবেই আমার কাছে হাসান ক্রিকেট শুরু করে। সেক্ষেত্র যখন দেখি, রান দ্রুত, বোলিং সুঁই, রান আপ, প্রকৃত টেলেন্ট একজন খেলোয়াডের ভূমিকায় সে। তখন থেকেই তাকে আমি ভিন্নভাবে মূল্যায়ন শুরু করি।
তার রান আপ, গেদার, ব্যাকফুট, ল্যান্ডিং, রিলিজ, বলিং স্পট, অ্যান্ড ফলো থ্রো গুড ছিলো। আমাকে এগুলো পরিবর্তন করতে হয়নি। প্রথমে তার বলে অনেক সুঁই ছিলো। কিন্তু সে যখন বিকেএসপিতে চান্স পায়, তখন সুঁই কমে গতি বেড়ে যায়। যা এখন পর্যন্ত বিকেএসপি নিয়ন্ত্রণ করছে।
জাতীয় অনুর্ধ্ব-১৯ দলে চান্স পেলো কীভাবে? এমন প্রশ্নে কোচ মনির, ২০১৩ সালে বিসিবি আয়োজিত জেলা অনুর্ধ্ব-১৪ দলে বান্দরবানে বিভাগীয় পর্যায়ে রাঙামাটি বনাম লক্ষ্মীপুর তার অভিষেক ম্যাচ। শুরুটা তেমন ভালো করতে পারেনি, তবে এক উইকেট পেয়েছে কিন্তু রান দেয়নি। ২০১৪ তে জেলা অনুর্ধ্ব-১৪তে খেলেছেন। বিভাগীয় পর্যায় থেকে ডাক পেয়েছে কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে এবং ময়মনসিংহে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলে জাতীয় পর্যায়ে বিসিবির বাচাইকারী কর্মকর্তাদের নজর কাড়ে।
এতে সে ২০১৫ সালে জাতীয় অনুর্ধ্ব-১৫তে খেলার সুযোগ পায়। তখনই বাংলাদেশ হয়ে ভারতের সঙ্গে খেলে ১৫ ওভার বল করে ১৮রান দিয়ে ৩ উইকেট ছিনিয়ে নেয় এবং বাংলাদেশ টিম জয়লাভ করে।
২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুর থেকে রাঙামাটিতে খেলে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ প্রাথমিক স্কোয়াডে খেলার সুযোগ পায় এবং বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্টে চান্স পায়। ওখানে গিয়ে ২০১৭ তে এশিয়া কাপ অনুর্ধ্ব-১৯ মালেশিয়া খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলতে পারেনি। এবার ২০১৮ শুরুর দিকে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে লড়ছে। তার বোলিং স্পিড ১৪১ কিলোমিটার। যা জাতীয় দলে খেলুড়ে কোন বোলারের নেই।
কোচ মনির হোসেন বলেন, বিদেশের মাটিতে সত্যিকার অর্থে হাসান কেবল তার মা-বাবা, আমাদের ও লক্ষ্মীপুরবাসীর মুখকে উজ্জ্বল করেনি, হাসান পুরো বাংলাদেশকে আলোকিত করে চলেছে।
তাকে সব সময় আমি উৎসাহ দিতাম, ভালো খেলার জন্য। কোথাও হেরে গেলে মনোবল যেন না হারায়, সে দিকেও খেয়াল ছিলো আমার। বলতাম, হারের পরেই জিত আছে। কৌশলে খেলতে হবে, ভবিষ্যতে ভালো খেলবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, সে যেন একজন ভালো ক্রিকেটার হয়। এখন ছেলে বিদেশের মাটিতে গিয়েও খেলছে। ও যখন খেলে তার খেলা টেলিভিশনের পর্দায় দেখলে বুকটা ভরে যায়।
হাসান সম্পর্কে মা মাহমুদা খাতুন রানী ও বাবা বলেন, “ওর সাথে আরো মায়ের যেসব সন্তাররা খেলছেন তাদের জন্য দোয়া করি তারাও যেন ভালো কিছু করে দেশের জন্য। আমরা স্বপ্ন দেখি, হাসান দ্রুতই জাতীয় দলে চান্স পাবে এবং সে বিশ্বের বুকে শুধু লক্ষ্মীপুর নয়, পুরো দেশকে আলোকিত করবে।
আরো পড়ুন: হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেরা‘পাঁচে’বাংলাদেশ
0Share