সাজ্জাদুর রহমান : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা ভাঙন রোধে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের প্রথম পর্যায়ের ১কি.মি কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভাঙনের মুখে থাকা বিস্তৃর্ণ জনপদ রক্ষায় এই বাঁধ যথেষ্ট নয়। উপজেলা রক্ষায় অন্তত আরও ৮ কি.মি. বাঁধ প্রয়োজন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে যেটুকু হয়েছে তাও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে মারাতœক হুকমিতে পড়বে উপজেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন।লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর তীরে কমলনগর উপজেলার অবস্থান। বিগত বেশ কয়েক বছরের ভয়াবহ ভাঙনে এখানকার সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনাসহ বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে সারা বছর ভাঙন অব্যাহত। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ভয়াবহ রুপ নেয়। যে কারণে আগামী বর্ষার আগেই আরও বাঁধ নির্মাণ চায় এলাকাবাসী।স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবীতে ভাঙন রোধে এক কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ চলছে। ওই বাঁধের ৯৩০ মিটার কাজ শেষ হয়েছে। চলমান কাজের সাথে বাঁধের দু’ পাশে আরও ৮কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ জরুরী। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণ করা না হলে আগামী বর্ষায় নির্মাণাধীন বাঁধসহ কমলনগরের বিন্তৃর্ণ জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিন মাতাব্বরহাট তীর রক্ষা বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়। নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে। যেটুকু বাঁধ রয়েছে তা ব্যতিত আশপাশের এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রয়েছে বাঁধের দুই পাশেও। সম্প্রতি ভাঙন বাঁধ অতিক্রম করেছে। এতে মারাতœক হুমকির মধ্যে রয়েছে ওই বাঁধ। এমন পরিস্থিতিতে ওই ১কিলোমিটারের সাথে তীর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে। সরকারের নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বেস্তে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।স্থানীয়রা জানান, বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু এখন আশার আলো নিভে যাচ্ছে। কমলনগরে ব্লক নির্মাণ করে নদী পথে ভোলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই পাড়ে (ভোলায়) কাজ হয়; অথচ কমলনগর ভাঙছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বর্ষায় ওইটুকু বাঁধও থাকবে না।কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাইফুদ্দিন আজম বলেন, মুল ডিপিপি’তে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে কমলনগরে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ৮ কি.মি. বাঁধ নির্মাণের দিক নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয়র নেতৃত্ব ও কৃর্তপক্ষের অবহেলা ও যথাযথ প্রদক্ষেপের অভাবে আজও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়নি। চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান বাঁধের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বিশেষ বিবেচনায় কমপক্ষে সাড়ে ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা না হলে নির্মাণাধীন এক কি.মি বাঁধও আগামী বর্ষায় নদীতে হারিয়ে যেতে পারে।
নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, নির্ধারিত এক কি.মি বাধেঁর ৯৩০ মিটার ( প্রায় ৯০) কাজ শেষ হয়েছে। গত বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও তীব্র জোয়ারের মুখে পড়ে শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অবশিষ্টসহ আরও ৬০০ মিটার বর্ধিত করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি পেলে কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নদী তীর রক্ষায় কমলনগরের ৮ কি.মি. কাজ বাস্তবায়নের জন্য লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রেরণ করেছে; সেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কমলনগর থেকে ব্লক ভোলায় নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন ভোলায় একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ চলছে। অতিরিক্ত ব্লকগুলো ভোলার বাধঁ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ বরাদ্দ দিয়ে রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার, রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এবং কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কথা। ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। সেনাবাহীর তত্ত্বাবধানে কমলনগরে বাঁধ নির্মাণের দাবী থাকলে তা করা হয়নি। ওই বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ নেয় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়।গত বছরের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগতি-কমলগর নদীর তীর রক্ষা বাঁধের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের আশ্বাস দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।
0Share