তাবারক হোসেন আজাদ: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ভূমিহীন জেলেরা নিজেদের জায়গা-জমির অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বেড়িবাঁধসহ অন্যের জমিতে। না পাচ্ছেন সু-পীয় পানি, স্যানেটেশন, বিদ্যুৎ ও পয়-নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই শুধু তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে সামান্য সহযোগীতা দেন জনপ্রতিনিধিরা। মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন জুড়ে বসবাস করা সরকারী তালিকাভূক্ত অনুযায়ী জেলের সংখ্যা ৭ হাজার ৫শ ৫৩ জন। এদের ৯০ ভাগ জেলে পরিবারই ভূমিহীন। এ সকল জেলেরা নদী-সাগরে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করেন এবং এটাই তাদের এক মাত্র পেশা। বেড়িবাঁধের দু’পাশ ঘেঁষে বসবাস করাসহ চরাঞ্চলের খাস জমিতে এবং অন্যের জমিতে অস্থায়ী ঘর নির্মান করে মনবেতর জীবন পার করছেন। স্থায়ী ঘর-বাড়ী না থাকায় তাঁদের সন্তানদের লেখা-পড়াসহ ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানরা জেলে পেশায় নাম লিখতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কানিবগারচরে প্রায় ৪ হাজার একরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে সরকারের খাস খতিয়ানভূক্ত প্রায় ৫ হাজার একর জমি আছে। অধিকাংশ খাস জমি উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যানসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন কৌশলে এসব চরাঞ্চলের জমি অবৈধ ভাবে দখল করে আছেন। খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার ক্ষেত্রেও চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। প্রকৃত জেলে ভূমিহীনদের খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের বিধান থাকলেও বাস্তবে কমসংখ্যক ভূমিহীনই সরকারের এ সুবিধা ভোগ করছেন। যাদের খাস জমি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তারাই খাস জমি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে থাকা খাস জমিগুলো দখল মুক্ত করে এসব খাস জমি জেলেদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া হলে ভূমিহীন জেলেদের বাসস্থান সংকট কেটে যাবে এবং হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল পালনসহ ঋতুকালীন শষ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারগুলোর অভাব দূর হবে এবং তাদের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার হারও বেড়ে যাবে।
আরো পড়ুন: লক্ষ্মীপুরের কানিবগার চরে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র
চরাঞ্চলে গিয়ে ভূমিহীন জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেঘনা নদী এলাকার মাছ ধরার সাথে জড়িত থাকায় নদী ভাঙ্গনের কারণে জায়গা-জমি হারিয়ে এবং মহাজনদের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নিজের সর্বসান্ত হচ্ছেন। বসবাসের জন্য জমি কিনার সাধ থাকলেও বছরের পর বছর অর্থ কষ্টে থাকায় তাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য জেলেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন-নিবেদন করেও এখন পর্যন্ত কোন খাস জমি বন্দোবস্ত পাচ্ছেন না। এতে নিজেদের জায়গা-জমির অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বেড়িবাঁধসহ অন্যের জমিতে। তাও আবার সু-পীয় পানি, স্যানেটেশন, বিদ্যুৎ ও পয়-নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নাই। সরকার তাদের প্রতি একটু নজর দিলেই পাল্টে যাবে তাদের জীবন যাত্রা, এমনটাই মনে করেন ওই ভূমিহীন জেলে পরিবারগুলো। এছাড়াও অভারের কারণে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে মাছ ধরার জন্য নদীতে পাঠাতে হয়। অভাবের সংসার ও পরের জমিতে অস্থায়ী বসবাস করায় তাদের সন্তানদের স্কুলে না পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলা মৎস্যজীবী জেলে ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তফা বেপারী জানান,
ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য প্রান্তিক জেলে জনগোষ্টীর পক্ষ হতে ভূমি মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপেক্ষিতে ভূমিহীন জেলে পরিবারদের মাঝে সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে একাধীকবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রসাশককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়। পরে জেলা প্রসাশকও একাধিবার উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু আজও জেলেরা কোন ভূমি বন্দোবস্ত পাচ্ছেন না। উল্টো জেলেদের প্রায় সময় ডেকে আবেদন যাছাই-বাছাইয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। বসবাসের নিজস্ব জায়গা না থাকায় অনেকেই তাদের বংশানুক্রমিক মাছ ধরার পেশা ছেড়ে এলাকার বাহিরে চলে গেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন,
স্থানীয় জেলেসহ ভাসমান ভূমিহীন জেলে পরিবারকে আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাসস্থান দেওয়া হচ্ছে। ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য জেলেদের আবেদন যাছাই-বাছাই করা চুড়ান্ত করা কাজও চলছে। প্রকৃত জেলেদের মাঝেই সরকার খাস-জমি দেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন,
উপজেলার ২নং উত্তর চরবংশী ও ৮নং দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা উপকূলীয় অ লের বিশাল কানিবগা চরের সরকারের খাস-জমিগুলো বিএনপি নেতাদের দখলে রয়েছে। আমার নামে কিছু অংশ জমি রয়েছে। অন্যগুলো জেলে ও ভূমিহীনদের নামে বন্ধবস্তো।
0Share