তাবারক হোসেন আজাদ: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিসহ ১০টি ইউনিয়নের ৩৪ ক্লিনিকে গত দেড় বছর ধরে চিকিৎসা সংকট বিরাজ করছে। উপজেলার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ৪জন চিকিৎসক। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২’শ থেকে ৪’শ রোগী সেবা নিতে আসে। কিন্তু ওয়ার্ড কেবিনে ভর্তিরত রোগী এবং জরুরী বিভাগে কোন ডাক্তার না থাকায় গ্রাম থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ী দিয়ে শহরে এসে অসহায় রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে না পেরে বাধ্য হয়ে শহরের ১৪টি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে ভূয়া ডাক্তারদের কাছে প্রতারিত হচ্ছেন। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালটি এক্সে মেশিনটি পাশাপাশি আলতাসোনোগ্রাফী ও ইসিজি মেশিনও দেড় বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেই। সম্প্রতি এপ্রিল মাসে দুইজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বদলী ও ডাক্তার সংকটের কারণে অনেকটাই সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে চারজন ডাক্তারই দাবী করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫০জনের শিশু-নারী ও পুরুষের আসন সংখ্যা রয়েছে। এ আসনের বিপরীতে চিকিৎসকের পদ থাকলেও কাজ করছেন মাত্র চারজন। তাদের চারজন ডাক্তারই আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার। নার্সের পদ শূন্য নেই। চরম ডাক্তার শূন্যতার মাঝেও গত এপ্রিল মাসে দুইজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) বদলী হয়েছেন। তাদের বদলী হওয়ার পর একজন যোগদান করার পরও গত ৪ দিন ছুটিতে রয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ পরিক্ষার জন্য ও টেকনোলজিষ্ট ও রেডিওলজিষ্ট না থাকায় এক্সে কক্ষটি তালা বদ্ধ রয়েছে গত ১২ বছর। রোগীরা বেশীর ভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ফার্মেসীগুলো থেকে। কোন চিকিৎসককে এ হাসপাতালে বদলী হলেও তারা নানা অজুহাতে অন্যত্রে বদলী হয়ে যান। গত দেড় বছর ধরে এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি সেবা কার্যক্রম। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন দুইশ থেকে চারশ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও যারা দায়িত্বে আছেন তারাও সঠিক সময়ে এসে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তিরত শিবপুর গ্রামের সালেহা বেগম ও কেরোয়া গ্রামের হাফিজ উল্যাহ বলেন, মারামারি ও ছিনতাইকারীদের হাতে মারাতœক জখম হয়ে ভর্তি আছি। ডাক্তারতো এমনিতেই নেই, যারা আছেন তারাও সঠিক সময়ে সেবা দেন না। হাসপাতালের খাবার অত্যন্ত নি¤œমানের (সকালের নাস্তা ও দুপুরের আলু-ভাত)। নার্সরাই এখানকার বড় ডাক্তার। জর, ব্যাথা, গ্যাষ্টিক ও ডায়রীয়া ওষুধ ছাড়া অন্য সব ওষুধ বাহিরের ওষুধের দোকানগুলো থেকে দিগুন টাকা দিয়ে কিনে আনতে হয়। কোন এক্সে পরিক্ষা-নিরীক্ষা বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে এনে দিতে হয়। তাও আবার ভূল রিপোর্টে ভূয়া ডাক্তারদের দ্বারা শিশু ও প্রসুতি মা‘দের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, আমরা সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসলেও ডাক্তাররা আসেন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টায়। এক-দেড় ঘন্টা অবস্থান করে শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে প্যাকটিসে চলে যান। খাবারের মান নিয়ে কথা বললে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। ওষুষ কোম্পানীর লোকজনের ভিড়েই হাসপাতাল সরগরম থাকে। অন্যদিকে গ্রামের ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসহকারীরা সঠিক দায়িত্ব পালন না করে বাড়ীতে গিয়ে নিজস্বকাজে ব্যস্ত থাকে। অসহায় রোগীরা সেবা না পেয়ে একাধিক অভিযোগ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সিভিল সার্জন ডাক্তার মোস্তাফা খালেদ বলেন, রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক সমস্য রয়েছে। একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানালেও কোন সু-ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওষুধ সংকট নেই ও খাবারের নি¤œমানের না বলে তিনি দাবী করেন।
0Share