জিল্লুর রহমান: জেলা এবং থানা পর্যায়ের সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদকর্মীদের তাঁদের সদস্যপদ প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাঁদের নীতিমালায় নাকি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কথা বলা নেই। এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও কেন এই পশ্চাৎপদতা। বর্তমান সময়ে অনলাইন সাংবাদিকতা বহুক্ষেত্রেই প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে শক্তিশালী, বিশেষ করে তাৎক্ষনিক সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে, এবং অল্প সময়ের মধ্যে বহু সংখ্যক পাঠকের কাছে সংবাদ পৌছে দিতে। ১৯৭০ সালে টেলিটেক্সট নামক প্রযুক্তির সহায়তায় ব্রিটেনে ডিজিটাল সাংবাদিকতার সূচনা হয়। সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে আমরা আজ ইন্টারনেট সভ্যতার প্রবেশ করেছি। আর এ ইন্টারন্টে মানেই হচ্ছে অনলাইন। সভ্যতার এ গতিধারাকেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপি অনলাইন সাংবাদিকতার প্রসার এবং গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে বহুগুনে, অনেক যায়গাতে প্রিন্ট মিডিয়া হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে অনলাইন সাংবাদিকতার কাছে। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক, এখানে প্রথম আলোর প্রিন্ট ভার্সনের চেয়ে অনলাইন ভার্সনের পাঠক কয়েকগুন বেশি। এখনকার জেনারেশনের সবাই ইন্টারনেট ফ্রেন্ডলি। সবাই ইমেইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তারা এখন তাৎক্ষণিক নিউজও পড়ে ফেলে মোবাইলে। সবার আগে তারা বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের খবর থেকেই তথ্য পেয়ে থাকে।
অথচ, এই অনলাইন মিডিয়া উপক্ষিত থাকে খোদ সংবাদ কর্মীদের ইউনিয়নগুলোতেই, জেলা পর্যায়ের প্রেসক্লাবগুলো অনলাইন মাধ্যমের সংবাদ কর্মীদের সদস্যপদ প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করছে, নানা নীতিমালার দোহাই দিয়ে। প্রেসক্লাব পেশাদার সাংবাদিকদের জায়গা। কিন্তু বাস্তবতা হলো পেশাদারিত্বের চেয়ে যাদের কাছে অন্য বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বছরের পর বছর তারাই পদ আঁকড়ে বসে থাকছেন। তাই সারাদেশের প্রেসক্লাবগুলোর গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। সাংবাদিকতা একটি সার্বক্ষণিক পেশা। এখানে পেশাদারিত্বই বড় কথা। কেবল পেশাদার সাংবাদিকরাই সংগঠনগুলোতে থাকবেন। অথচ প্রেসক্লাবগুলোর সদস্যপদ এমন কিছু অপেশাদার মিডিয়া কর্মীরা বছরের পর বছর ধরে আঁকড়ে আছেন, যাদের কাছে পেশাদারিত্বের চেয়ে অন্য বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আবার অন্যদিকে কিছু পেশাদার সংবাদকর্মীদের উপেক্ষা করা হচ্ছে, তারা অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করেন বলে। পেশাদার অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রেসক্লাবে সদস্যপদপ্রাপ্তিতে জটিলতা থাকবে কেন?
সারাদেশের প্রেসক্লাবগুলোকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গঠনতন্ত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। ভূইঁফোড় যে সংবাদপত্র ও অনলাইন আছে তাদের বদলে পেশাদার নিউজপোর্টালগুলোর সংবাদকর্মীদের সদস্যপদ দিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই গণমাধ্যমের স্বীকৃতি স্বরূপ তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় অনলাইন নীতিমালা মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। প্রেস ইনস্টিটিউট তাদের সাংবাদিকতার ডিপ্লোমা কোর্সেও অনলাইন সাংবাদিকতার বিষয়টি যুক্ত করেছে। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট অনলাইনে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সনদ বিতরণ করেছেন।
সাংবাদিকতায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জ না নিতে পারলে টিকে থাকা যাবে না।আগে টাইপরাইটার ছিলো,এখন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। নানা কারনে আগামী ১০ বছর প্রিন্ট মিডিয়া সাসটেইন করবে কীনা, এই নিয়ে এখন বিস্তর আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেনীর সকল প্রিন্ট মিডিয়াগুলো তাদের অনলাইন মাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করছেন।
শুধু তাই নয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোও একই কাজ করছে, এই তালিকায় বিবিসির মত প্রভাবশালী গনমাধ্যম ও রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায়, সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো, বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রেসক্লাবগুলো তাঁদের সদস্যপদ প্রাপ্তির নীতিমালায় পরিবর্তন এনে, পেশাদারি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদকর্মীদের স্থান করে দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে নিউজ পোর্টালগুলোর একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড নিরুপন করা যেতে পারে। যুগ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই তুলনায় মফশ্বলের সাংবাদিক সংগঠনগুলো পিছিয়ে থাকবে কেন? সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সদস্যপদ প্রাপ্তিতে পেশাদারিত্বই হোক প্রধান শর্ত, সংবাদমাধ্যমেগুলোর ভবিষ্যৎ চ্যলেঞ্জ মোকাবেলায় অবশ্যই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। তাই, সংবাদকর্মীদের সংগঠনে অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধিত্ব থাকা এখন সময়ের দাবী।
0Share