নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়পুর: ২-৫ বছর আগের কথা। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরে মাদকের কথা উঠলেই আসত মুচি পট্টি, জ্বীনের মসজিদ সড়ক, মোল্লারহাট, কেরোয়াসহ কয়েকটি এলাকার নাম। সেই চিত্র আর নেই। এখন মাদক ব্যবসা ছড়িয়েছে জেলা থেকে উপজেলা হয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম পযন্ত। মাদক নিয়ে দুশ্চিন্তার ছায়া জেলাজুড়ে। তবে গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে দেশব্যাপী চলা মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে। অবশ্য বেশ কয়েক মাস আগে জেলা ও উপজেলা পুলিশ প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
রায়পুরে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। গত এক বছরে অভিযান চালিয়ে ১৪৬ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রায়পুরে ঝড়ের গতিতে মাদকের বিস্তার ঘটছে। এমনকি কোনো কোনো জনপ্রতিনিধিও মাদকে আসক্ত। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর রায়পুরে মাদক ব্যবায়ীরা আতঙ্কে আছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রায়পুর শহরে মাদক জোন হিসেবে চিহ্নিত সর্দার বাড়ি ও পোস্ট অফিস সংলগ্ন মাছ বাজার এলাকা মুচি পট্টিতে। কিন্তু এখন মাদক ছড়িয়েছে পুরো উপজেলার দশটি ইউনিয়নে। এখানে নারীসহ একাধিক প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী আছে। তাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছিল; কিন্তু জামিনে এসে আবার মাদক কারবারে জড়িয়েছে।
এ ছাড়া হায়দরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বেড়ির মাথায়, কেরোয়া ইউনিয়নের মোল্লার হাট ও মালি বাড়ি এলাকায়, চরপাতা এলাকার বোর্ডার এলাকায়, চরআবাবিল ইউনিয়নের উদমারা ও ক্যাম্পেরহাট এলাকায়, চরবংশী ইউনিয়নের সুইচগেট সংলগ্ন পরিত্যক্ত পাউবো এলাকায়, সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া ও বাসাবাড়ি বাজার এলাকায়, বামনী ইউনিয়নের কাফিলাতুলি বাজার ও কেএসপি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়, ১০নং রায়পুর ইউনিয়নের চালতাতুলি, সোলাখালী ব্রিজ ও মিতালী বাজার এলাকাতেও মাদক কারবার জমজমাট। শহরের অনেক পরিত্যক্ত ভবন, ঘুপচি-গলি ও নির্মাণাধীন ভবনও মাদকসেবীদের আখড়া। একসময় মাদকসেবীরা শহরের বিশিষ্টজন বা পাড়ার মুরব্বিদের দেখে ভয় পেত। এখন সে অবস্থা নেই।
রায়পুর শহরে মাদক সহজেই পাওয়া যায়। এতে তরুণরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। জানা গেছে, রায়পুর উপজেলায় অন্তত দুইশতাধিক পরিবারে অশান্তির আগুন শুধু মাদকের কারণে। অনেক সাজানো ঘর ভাঙছে মাদকের ছোবলে। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোও বিপাকে পড়েছে নিজ পরিবারের কারো কারো মাদকাসক্তি নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রায়পুর শহর বা গ্রামে কারা কারা মাদক কারবারে জড়িত তা স্পষ্ট। অনেক ক্ষেত্রে তারা ধরাও পড়ে। কিন্তু কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তবে এখন পর্যন্ত মাদকের গডফাদার কেরোয়া ইউপি সদস্য হোসেন মিয়ার ছেলে রাজুকে পুলিশ আটক করে কারাগারে পাঠান। শহরের বেশ কয়েকজন বড় মাদক বিক্রেতা আছে। তাদের বসত বাড়ি হয়েছে কয়েক তলা পাকা ভবন। তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকাও রয়েছে। তারা কখনো কখনো ধরা পড়লেও দ্রুতই আবার অপরাধ জগতে ফিরে আসে।
থানা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই তারা মাদকসহ অপরাধীদের আটক করছে। উপজেলা সদর ও গ্রাম সবখানেই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। গত ২০ এপ্রিল ৫ কেজি গাঁজা, একটি এলজি ও তিন রাউন্ড গুলিসহ নাছির উদ্দিন নামে এক মাদক স¤্রাট, ১৮ মে পৌরসভার দক্ষিন দেনায়েতপুর গ্রাম থেকে ৬মাসের সাজা প্রাপ্ত মো: মানিক, দক্ষিণ কেরোয়া গ্রাম থেকে ৩০ পিচ ইয়াবাসহ ওসমান গনি, চরপাতা গ্রাম থেকে ২০০ পিচ ইয়াবাসহ ইসমাইল হোসেন লিমন, পূর্বলাচ গ্রামের ঈদগাহ্ মাঠ থেকে ২৫পিচ ইয়াবাসহ সোহেল হোসেন পিয়াস, চরআবাবিল গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম গাঁজাসহ আব্দুল মান্নান, রায়পুর শহর বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ৫৪ পিচ ইয়াবাসহ নুর নবী (শুক্কুর আলী), মধুপুর গ্রাম থেকে ২৮পিচ ইয়াবাসহ ৮টি মাদক মামলার পলাতক আসামী কসাই আক্তার ও শুক্রবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় শহরের মোহাম্মদীয়া হোটেলের সামনে থেকে ২২ পিচ ইয়াবাসহ ফরহাদসহ গত এক বছরে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১৪৬ জন পলাতাক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়।
রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, মাদক নিয়ে কোনো আপস নয়। যেকোনো মূল্যে উপজেলাকে মাদকমুক্ত করা হবে। এ জন্য পুলিশের একাধিক টিমও মাঠে কাজ করছে।
0Share