নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়পুর; লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি এবং কমলনগরে গাছে গাছে ঝুলছে ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ঈদসহ নানা শুভেচ্ছা বানী সম্বলিত নানা সাইনবোর্ড, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। লোহার পেরেক ঠুকে বা তার দিয়ে এগুলো টাঙ্গানো কিংবা আঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে। বেশিরভাগ সাইনবোর্ডই রাজনীতিবিদের শুভেচ্ছা বানী দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোচিং বানিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবোর্ড চোখে পড়চেই। রাস্তার পাশে গাছ থাকলেই তাতে টাঙ্গানো হচ্ছে সাইনবোর্ড, ব্যানার কিংবা প্ল্যাকার্ড। গাছের পেরেক ঠুকে এসব লাগানো আইনসম্মত না হলেও তা কেউ মানছেনা। বিশেষ করে রাজনীতিবিদরা নিজেদের ক্ষমতাবলে যেন দখল করে নিয়েছেন রাস্তার পাশের গাছগুলো ও ভবনের দেয়ালগুলো। জীবন্ত গাছে বার বার পেরেক ঢুকানোর কারণে অনেক জায়গায় কিছু গাছ মরে েযেতে দেখা গেছে।
গাছ কোন জড়বস্তু নয়। গাছেরও প্রাণ আছে। একএকটা গাছ একএকটা অক্সিজেনের কারখানা। এরপরও নিজের কিংবা ব্যবাসায়ীর প্রচারোনার জন্য আইনের তোয়াক্কা না করে অনেকে গাছে পেরেক মেরে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ও দেয়ালে আঠা দিয়ে পোষ্টার লাগিয়ে দিচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও দৃষ্টিকটু।
রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি এবং কমলনগরে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সব গ্রামই রাস্তার পাশে থাকা গাছে পেরেক দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। সাইনবোর্ডের পরিমান বেশি দেখা গেছে রায়পুর থানার সামনের বড় দুটি গাছে। রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের শহরের ভূঁইয়া রাস্তা থেকে এলএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলোর পাশের গাছগুলোতে। লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুর-চাঁদপুর বর্ডার বাজার পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো সব গাছেই আছে পেরেকবিদ্ধ সাইনবোর্ড । অন্য সড়কগুলোতেও গাছে গাছে সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। রায়পুর শহরের বাসষ্ট্যান্ড, থানার সামনে, ট্রাফিকমোড়ে, উপজেলা পরিষদের সামনে ও ভিতরের গাছগুলোতে প্রায় পাঁচ শতাধিক পেরেকবিদ্ধ সাইনবোর্ড দেখা গেছে।
বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, এ অবস্থা তৈরী হয়েছে গত ছয়-সাত বছর আগে থেকে। এর আগে হাতে গোনা দুই-একটি ছাড়া খুব বেশি সাইনবোর্ড চোখে পড়ত না। পাঁচ বছর আগে থেকে গাছে গাছে সাইনবোর্ড বেশি চোখে পড়ছে। এর মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ ও দলীয় নবাগত নেতাদের সাইনবোর্ডের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। নববর্ষ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় নেতাদের শুভেচ্ছা সাইনবোর্ড দেখা গেছে। অনন্য দিবস উপলক্ষ্যে নতুন নতুন সাইনবোর্ড গাছে ঝুলিয়ে থাকেন রাজনীতিবিদ ও নেতার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় তাদের ছবি সংবলিত সাইনবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড গাছে-গাছে ও দেয়ালে-দেয়ালে আঠা দিয়ে পোষ্টার আটকে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন যুবক বলেন, যারা মানুষকে সচেতন করবেন। তাাঁ নিজেরাই গাছে পেরেক ঠুকে নিজেদের অসচেতনতার পরিচয় তুলে ধরেছেন।
রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি বলেন, গাছের প্রতি এমন নিষ্টুরতা কষ্টদায়ক। গাছ পরিবেশ ও মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু। গাছে পেকের ঠুকে আমরা নিষ্টুরতা দেখাচ্ছি সেই বন্ধুর প্রতি।
রায়পুর শহরেরর বিশিষ্ট ব্যবাসয়ী আবুল হাশেম বলেন, রাজনীতি এখন আর মানুষের মধ্যে নেই। তা গাছের ঢালে ডালে চলে গেছে। সব গাছেই রাজনীতিবিদদের সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। যেহেতু মানুষের মধ্যে পরিচিতি নেই, কিন্তু গাছের ডালে ঠিকই ঝুলছেন তিনি। যেহেতু আইন আছে, সেহেতু এসব সাইনবোর্ড প্রশাসন তুলে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে। রায়পুরের সাহিত্য পরিষদের নেতা জহির রহমান বলেন , ভূল বানানে লেখা সাইনবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড গাছে গাছে ঝুলছে। ফলে সাইনবোর্ড দেখে ভুল বানান শিখছে শিক্ষার্থীরা। গাছে পেকের বিদ্ধ করে বে-আইনীভাবে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছি আমরা। রাজনীতিবিদরা ছাড়াও এ শ্রেণির অসাধু ব্যাক্তি অবৈধাবে আর্থিক লাভের আশায় নিন্মমানের পন্যের বিজ্ঞাপন গাছে পেরেক মেরে প্রচার করছে। কোন ভালো প্রতিষ্ঠান এ ভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করে না। এসব বিজ্ঞাপনে ক্ষতিগ্রস্ত আমরা সবাই। তাই প্রশাসনিকভাবেই এসব সাইনবোর্ড অপসারন করা দরকার।
রায়পুর সরকারি কলেজের জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক শাহ আলম পাটওয়ারী বলেন, গাছেরও প্রাণ আছে। পেরেক মারার কারনে ছোট গাছ গুলো মারা যেতে পারে এবং ক্ষতি হতে পারে বড় গাছের। পরিবেশ রক্ষার জন্য যেমন পাখি নিধন নিষেধ তেমনী গাছের ক্ষতি করাও দন্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
রায়পুর পৌর মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক হাজী ইসমাইল খোকন বলেন, কুয়েত আ’লীগের আহবায়ক কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুল লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর আসন থেকে আ’লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী। এজন্য তিনি নিয়মিত গনসংযোগ, নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়, উপঢৌকন বিতরন ও ১০ টি ইউনিয়নে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করে সকল ব্যয় বহন করছেন। অন্যন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মত তারও ছবি সম্ভলিত প্ল্যা-কার্ড গাছের ঢালে পেরেকবিদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ইসামাই হোসেন খোকন বলেন, অন্যদের মত পাপুলের কিছু প্ল্যাকার্ড গাছে লাগানো হয়েছে। এখন ঈদ উপলক্ষ্যে গাছে গাছে ও দেয়ালে দেয়ালে আরো সাইনবোর্ড-প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে।
রায়পুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শিল্পী রানী রায় বলেন, গাছে পেরে সাইনবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড লাগানো ঠিক নয় । এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share