জুনাইদ আল হাবিব: “ইলিশ ঘাট হতে শুরু করে নদীর গা ঘেঁষে আদুরে ভঙ্গিতে হেলেদুলে এঁকেবেঁকে দু’দিকের দিগন্তে মিলিয়ে গেছে সবুজ ঘাসের কার্পেটে আচ্ছাদিত মেঘনাতীর। মেঘনার ইতঃস্তত মৃদু ঢেউ আনমনে আলতো করে ভিজিয়ে দিচ্ছে সে মনোমুগ্ধকর সবুজ কার্পেট। নদীতীরে শুনশান নীরবতা। এই অখণ্ড নীরবতায় ছোট ছোট ঢেউ ভাঙার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, দিগন্ত ছোঁয়া মুক্ত আকাশ আর বিশাল মেঘনার বুকে ডিঙি নৌকার নাচন পর্যটকদের মনকে আকৃষ্ট করে। নাড়া দেয় মনের গভীরেও। নদীতীরে ঝুলে পড়া নারকেল-সুপারির বাগান, বিশাল ছাতার মতো ছড়ানো রেইন ট্রি আর অসংখ্য গাছগাছালিতে ভরা চোখজুড়ানো সবুজে সেজে আছে মেঘনাতীরে কোমল এ প্রকৃতি।
শেষ বিকেলে নিঃসঙ্গ ঘুঘুর ডাক শেষে ক্লান্ত সূর্যটা যখন বিদায় নিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনি অধিক ব্যস্ততায় বাড়ির পথ ধরে রাখাল বালক তার গরুর পাল, দুরন্ত শালিকের ঝাঁক আর শ্বেতশুভ্র বলাকার দল। ইট- পাথরে আচ্ছাদিত শহরের যান্ত্রিকতা আর জীবনের জটিল সমীকরণে মন যখন হাঁপিয়ে উঠবে তখনই প্রকৃতির এই অপরূপ মহাস্বর্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ছুটে আসতে পারেন আপনিও।
বিশাল নদী, খোলা আকাশ আর সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিষন্নতা আর একঘেয়েমি মনোভাব কাটিয়ে মনকে ভরিয়ে তুলুন প্রাণপ্রাচুর্য আর উচ্ছ্বলতায়। ফেরার সময় বোনাস হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাবেন রূপালি ঝিলিক দেয়া তাজা ইলিশ।” এতক্ষণ বলছিলাম অন্য জগতের কথা। মঙ্গলগ্রহের কথা নয়, অন্য এক বাংলাদেশের গল্প।
যেখানের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক দল ঈদ, উৎসব কিংবা অবসরে একটু বিনোদনের জন্য ভিড় জমান। এ মনোরম দৃশ্যে গাঁথা মেঘনা সৈকত কোথায় আপনি জানেন কি? এটি উপকূলীয় জনপদ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনাতীরে অবস্থিত। যেখানের প্রশস্ত সুবিশাল তরে প্রাণ খুলে হাঁটতে পারেন পর্যটকরা। দক্ষিণ প্রান্তে মিলবে মেঘনার কূল ছোঁয়া নির্মল বাতাসের সান্নিধ্য! উত্তর প্রান্তে রয়েছে নারিকেল জিঞ্জিরা। এ যেন এক মিনি কক্সবাজার।
সমুদ্রের বুক থেকে সরাসরি আসা ঢেউও আছড়ে পড়ছে কূলে। দু’পাশেই এ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, নদীতীরে মেঘনার বুকের মতিরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খেয়া ঘাট থেকে খুব কাছেই মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ চর শামছুদ্দিন দেখতে উৎসুক পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। “এটি খুব ইনজয়েবল জায়গা। আমরা একটু সুযোগ পেলেই এখানে ঘুরতে আসি। এখানে আসলে আমাদের মাইন্ড চেঞ্জ হয়ে যায়।” কথাগুলো ঈদে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. ওমর ফারুকের।
তরুণ প্রকৃতিপ্রেমী এ এ মনছুর ম্রোহিয়ান নিজ অনুভূতি প্রকাশ করে বলছিলেন, “এটি একটি পর্যটন এরিয়া। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। আমাদেরও এটা বেশ ভালো লাগে। কারণ এটা আমাদের এরিয়া। আমরা চাই এটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সরকার ঘোষণা করুক।” বিগত দিনের চিত্র খেয়াল করলে উঠে আসে এ জনপদে বর্তমানে পযর্টক সংখ্যা বেড়েছে।
যার কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার একটু উন্নতি। কিন্তু এখানের তোরাবগঞ্জ- মতিরহাট সড়ক সংস্কারে বাকি কয়েক কিলোমিটার কাজ শেষ না হওয়াতে এ অঞ্চলের পর্যটন বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্থানিয় সূত্রগুলো বলছে। এ প্রসঙ্গে মতিরহাট ইলিশ ঘাটের সভাপতি ও চর কালকিনি ইউপি সদস্য(প্যানেল চেয়ারম্যান) মেহেদী হাসান লিটন বলছিলেন, “এটি বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এখানে দেখার মতো পর্যটন এরিয়া আছে, অনেক বড় ইলিশ ঘাট আছে। যদি এ অঞ্চলের মতিরহাট সড়কের তোরাবগঞ্জ হয়ে নোয়াখালী, মাইজদি, ঢাকা, চট্টগ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায় তবে এ অঞ্চল দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে বিবেচিত হবে। আর এখানে আসা পর্যটকরা সব সময় নিরাপধ। আমরা খেয়াল রাখছি, পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নেই বিনোদন নিতে পারে।”
কীভাবে যেতে হবে: সড়কপথে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রামগতির বাসে প্রথমে তোরাবগঞ্জ নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি, রিকশা, মটরসাইকেলে মতিরহাট পৌঁছানো যাবে। নৌপথে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ যোগে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট অথবা চাঁদপুরের ভৈরবী লঞ্চ ঘাট। সেখান থেকে সিএনজিতে লক্ষ্মীপুর ঝুমুর স্টেশন, এরপর সেখান থেকে সিএনজি বা বাসে তোরাবগঞ্জ যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি, রিকশা বা মটরসাইকেলে মতিরহাট পৌঁছানো যাবে। চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে চট্টগ্রামের অলঙ্কার থেকে লক্ষ্মীপুরের বাসে প্রথমে তোরাবগঞ্জ যেতে হবে। তারপর তোরাবগঞ্জ থেকে সিএনজি, রিকশা বা মটরসাইকেলে মতিরহাট পৌঁছানো যাবে। নৌপথে লঞ্চ রিজার্ভ করে সরাসরি আসা যাবে। বরিশাল থেকে সড়কপথে বরিশালের ছোট লঞ্চঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজিতে লক্ষ্মীপুর ঝুমুর স্টেশন, এরপর সেখান থেকে সিএনজি বা বাসে তোরাবগঞ্জ যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি, রিকশা বা মটরসাইকেলে মতিরহাট পৌঁছানো যাবে। নৌপথে লঞ্চ রির্জাভ করে সরাসরি মেঘনা পাড়ি দিয়ে মতিরহাটে আসা যাবে। ভোলা থেকে সড়কপথে ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লঞ্চ যোগে মজুচৌধুরীর হাট ঘাট, সেখান থেকে সিএনজি যোগে জেলা সদরের ঝুমুর স্টেশন। এরপর বাস বা সিএনজিতে তোরাবগঞ্জ নেমে তোরাবগঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে সিএনজি, রিকশা বা মটরসাইকেলে মতিরহাটে পৌঁছানো যাবে। নৌপথে ইলিশা ঘাট থেকে ট্রলারে করে অথবা লঞ্চ রির্জাভ করে সরাসরি মতিরহাটে আসা যাবে।
0Share