সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের কার্য নির্বাহী পরিষদের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪ ঘন্টার এ নির্বাচন কে ঘিরে লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিক সমাজে প্রত্যাশা অনেক। এবারের নির্বাচনের প্রচারণা বিগত সকল নির্বাচনকে হার মানিয়েছে বলে জানান কয়েকজন সাংবাদিক। ফেসবুক পোস্ট, ম্যাসেঞ্জ আর লাইক শেয়ারে বেশ জমেছিল প্রচারণা।
এ নির্বাচনে বিশেষ দিক হচ্ছে বহু বছর পর লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব নিয়ে বিভেদকারী সকল পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, প্রার্থী হয়েছে এবং নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালিয়েছে।
অনেক প্রার্থী ফেসবুকে নির্বাচনী ইশতেহার প্রচার করে ও ভোট প্রার্থনা করেছেন। সব মিলে মিডিয়াপাড়ার এ নির্বাচন কে ঘিরে সাংবাদিকদের মধ্যে এক ধরেনের আমেজি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রবিবার রাত পর্যন্ত মিডিয়াপাড়া খ্যাত লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব চত্ত্বর, মোহাম্মদীয়া হোটেল মোড় আর সাংবাদিকপাড়া খ্যাত রহমানিয়া প্রেস মোড়ে জমেছিল নির্বাচনী আড্ডা। প্রবীণ সাংবাদিকদের তুলনায় নবীনদের আমেজ যেন একটু বেশিই।
সোমবারের এ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণে যাবেন বলে জানা গেছে। উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষও।
যাদেরকে ঘিরে এত আয়োজন তাদের ভোট সংখ্যা মাত্র ৭৭। ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির ১১টি পদের মধ্যে ১০টি পদে ভোটগ্রহণ হবে। এতে ৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন- সভাপতি পদে ৭ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৫, সহ-সভাপতি পদে ২, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ২, কোষাধ্যক্ষ পদে ২, প্রচার সম্পাদক পদে ২, ক্রীড়া ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদে ৪, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ৪ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য ২ পদে ৪ জন।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন, লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. আবুল বাশার। সহকারি কমিশনার হিসেবে আছেন, আওয়ামী লীগ নেতা মো. রুহুল আমিন মাস্টার এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না।
এর আগে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ছিল। যেখানে সভাপতি নির্বাচিত হয় দৈনিক রুপসী লক্ষ্মীপুর পত্রিকার সম্পাদক কামাল উদ্দিন হাওলাদার আর সাধারণ সম্পাদক হন নিউজটোয়েন্টিফোর এবং দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম পাবেল। তার ৯ বছর আগে ২০০৯ সালে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী যে সকল প্রেসক্লাব রয়েছে এগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। প্রেসক্লাবের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রবীন সাংবাদিক মরহুম আলহাজ্ব গোলাম রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আরেক প্রবীন সাংবাদিক এম এ মালেক। পরবর্তীতে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, মরহুম গোলাম রহমান, মরহুম জাকির হোসেন, মরহুম এম এ মঈদ, অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান, মোঃ কামাল হোসেন, হোসাইন আহাম্মদ হেলাল, নাসির উদ্দিন মাহমুদ, আ হ ম মোশতাকুর রহমান, মোঃ কাউছার, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ সাংবাদিকগণ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শুরুতে প্রেসক্লাবের কোন স্থায়ী ভবন না থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে নিজস্ব ভবন। তবে ভবন থাকলেও লক্ষ্মীপুর জেলার সাংবাদিকদের কে একত্রিত করে ধরে রাখার ইতিহাস খুব কমই আছে এ প্রতিষ্ঠানটির। অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে এ প্রেসক্লাবের মামলা কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক টিপু সুলতান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের উদ্যোগে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদের মাঝে ঐক্য দেখা যায়নি। ফলে একটি মাত্র প্রেসক্লাবের অভাবে লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিকদের মাঝে ওই সময়ে ঐক্য গড়ে ওঠেনি।
লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সদস্য না, তবে লক্ষ্মীপুর জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে কাজ করে এমন সাংবাদিকের সংখ্যাও আছে অনেক। তবে সদস্যপদ গ্রহন নিয়ে এখনো সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি হয়নি বলে সদস্য পদ বঞ্চিত অনেক সাংবাদিকের ক্ষোভ থাকলেও এবারের নির্বাচনকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন।
0Share