ছোটন সাহা : উপকূলের টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর পর্যন্ত বিস্তৃত ৭১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম মন্টু। যিনি উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক, কোস্টাল জার্নালিজম স্পেশালিস্ট ও উপকূল বন্ধু নামে পরিচিত।
গত ৭ বছর ধরে নিবিড়ভাবে উপকূলের ১৬ টি জেলায় চষে বেড়াচ্ছেন, তুলে আনছেন বিপন্ন উপকূলের সমস্যা, সম্ভাবনা, উন্নয়ন ও উপকূলের জীবনচিত্র। এ কাজ করে একাধিক অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি।
এ সাংবাদিকের চিন্তা-চেতনায় সারাক্ষণ থাকে উপকূল। যিনি সব সময় উপকূল নিয়ে গণমাধ্যমে লেখেন, কথা বলেন। সভা-সেমিনারেও তুলে ধরেন উপকূলের গুরুত্ব।
ঝড়-বন্যা কিংবা তীব্র শীত উপেক্ষা করে ছুটে বেড়ান উপকূলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাকে দেখা যায় উপকূলের জনপদে।
উপকূল নিয়ে কাজ করা এ মেধাবী সাংবাদিকের কাজের পরিধি শুধু উপকূলে ঘুরে সংবাদ পরিবেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দীর্ঘ অনেক বছর ধরে তিনি উপকূল দিবসের দাবিও তুলছেন। যা দেশব্যাপী বেশ আলোচিত।
১২ নভেম্বর উপকূল দিবসের দাবিতে প্রতি বছরই তিনি উপকূলের ১৬ জেলায় একযোগে মানববন্ধন, আলোচনা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ বছরও উপকূল দিবসের দাবিতে উপকূলের জেলায় জেলায় নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু এক দশকের বেশি সময় ধরে উপকূল নিয়ে কাজ করছেন। কেন্দ্রে উপকূলকে পরিচিত করা এবং গুরুত্ব বাড়াতে নিরলস প্রচেস্টা আজও অব্যাহত রয়েছে তার। তিনি উপকূলের সাংবাদিকদের নিয়ে গঠন করেছেন ‘কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম’।
শুধু তাই নয়, স্থানীয় সাংবাদিকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, নিজের কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও উপকূল নিয়ে কাজ করার বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরেন। যা থেকে উপকূলের কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন এবং নিজ নিজ গণমাধ্যমে তুলে আনছেন উপকূলের বিপন্ন মানুষের নানা খবর। বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমে উপকূল নিয়ে লেখালেখি করছেন তারা।
উপকূলের সাংবাদিকতার উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে ১৬ জেলার ৭১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি শুধু বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধি কিংবা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পরিচিত নন; তিনি পরিচিত জেলে-কৃষক থেকে শুরু করে তৃনমূলে। এক নামেই পরিচিত ‘রফিকুল ইসলাম মন্টু’।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মহাপ্রলয়ের দিন। এদিন উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো গোটা উপকূল। উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’। এ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় প্রায় সমগ্র উপকূল। প্রাণ হারান বহু মানুষ। বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হারিয়ে পথে বসেন কয়েক লাখ মানুষ।
শুধু যে বাংলাদেশ তা নয়, এ ঘূর্ণিঝড় গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়টি ওই বছরের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয়ে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
১১ নভেম্বর এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ওই রাতেই আঘাত হানে উপকূলে।
এ ঝড়ের পর এক এক করে পেরিয়ে গেছে ৪৯ বছর। এ বছর ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। এ দিনটিকে স্মরণে রাখতে ‘উপকূল দিবস’ দাবি তুলেছেন রফিকুল ইসলাম মন্টু। সে লক্ষ্যেই তার নেতৃত্ব জেলায় জেলায় পালিত হচ্ছে স্মরণসভা, আলোচনা সভা ও উপকূল দিবসের দাবিতে মানববন্ধন।
এ বিষয়ে কথা হয় কোস্টাল জার্নালিজম স্পেশালিস্ট রফিকুল ইসলাম মন্টু সঙ্গে। তিনি জানান, উপকূল আমার প্রাণ, আমি এক দশক ধরে উপকূল নিয়ে কাজ করছি। উপকূলের উন্নয়নে বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় কথা বলেছি। আমি মনে করি উপকূলের গুরুত্ব আরও বাড়াতে হবে। কারণ, উপকূলের গুরুত্ব না হলে উন্নয়ন হবে না, এতে বঞ্চিত হবে সেখানকার বাসিন্দারা। তাই উপকূল ও উপকূলের বিপন্ন মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে আমার মতো সবাইকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রলয়ঙ্কারী ঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’। এ ঝড়ে বহু প্রাণহানি হয়েছে, ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে উপকূল। ঝড়ে নিহতদের স্মরণ এবং উপকূলের গুরুত্ব বাড়াতে আমি দীর্ঘদিন থেকে ‘উপকূল দিবস’ ঘোষনার দাবি তুলেছি। আমি মনে করি, একদিন উপকূল দিবসের দাবি বাস্তবায়ন হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী, ভোলা
0Share