লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার দায়ে স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে স্বামীকে নির্যাতন করে হত্যার আরেকটি মামলায় অভিযুক্ত স্ত্রীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ রহিবুল ইসলাম পৃথক দু’টি মামলায় এ রায় দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করিয়ে হত্যা করেন স্বামী হোসেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত হোসেনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেন। হোসেন বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
এদিকে একই আদালত রামগতি উপজেলার সবুজগ্রাম এলাকার জসিম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ফরিদা বেগমকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় বিবাদী ফরিদা বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, হোসেনের সঙ্গে ২০০৩ সালে সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নে যাদৈয়া গ্রামের আব্দুল হাসেমের মেয়ে শিল্পীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। ২০১৬ সালের দিকে হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে হোসেন চট্টগ্রামে বসবাস করতো। এরপর থেকে তিনি প্রথম স্ত্রী সন্তানদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেয়। হোসেন প্রথম স্ত্রীকে পথের কাটা মনে করতো। এজন্য তিনি শিল্পীকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েই চট্টগ্রাম থেকে চরমনসা গ্রামের বাড়িতে আসেন। ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় পাশ্ববর্তী তোরাবগঞ্জ বাজার থেকে হোসেন কীটনাশক কেনে। পরে বাড়িতে গিয়ে কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে স্যালাইন বলে শিল্পীকে খেতে বলে। পানি ঘোলা ও গন্ধ হওয়ায় শিল্পী তা খেতে চায়নি। এসময় তাদের মেয়ে সীমা আক্তার খেতে চাইলেও হোসেন তাকে খেতে দেয়নি। একপর্যায়ে হোসেন জোরপূর্বক মুখ চেপে শিল্পীকে বিষ খাইয়ে দেয়৷ পরে শিল্পী কয়েকবার বমি করে। নিজেকে বাঁচাতে হোসেন তার স্ত্রীর অসুস্থতার নাটক সাজিয়ে একজন গ্রাম্য ডাক্তার এনে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। অবস্থা গুরুতর দেখে বাড়ির লোকজন শিল্পীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই বছর ২৯ অক্টোবর শিল্পীর বাবা আবুল হাশেম বাদী হয়ে হোসেনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনার পর থেকে হোসেন পলাতক রয়েছে।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সবুজগ্রামে ২০১৬ সালের ৬ জুন রাতে শ্বশুর বাড়িতে খুন হন জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। ঘটনার পর জসিম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পুলিশ একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে। জসিম একই উপজেলার চর আফজল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন জেলে ছিলেন।
এ ঘটনায় জসিমের ছোট ভাই অহিদুর রহমান রামগতি থানায় বাদী হয়ে প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জসিমকে কিল, ঘুষি ও লাথি দিয়ে বুকে ও পেটে মারাত্মক আঘাতের কারণে তার পাঁজরের নয়টি হাঁড় ভাঙা হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে।
পরে অহিদুর রহমান তার ভাবি ফরিদা বেগমসহ অজ্ঞাত তিন-চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। দাম্পত্য কলহের জেরে ফরিদা বেগম তার ভাইকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার দুই মাস পর ৭ আগস্ট ফরিদাকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এরপর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
২০১৭ সালের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামগতি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন ভিকটিম জসিমের স্ত্রী ফরিদা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় ফরিদাকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন উভয় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
0Share