লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে বে-আইনি ভাবে গড়ে উঠা অনেকগুলো ইট ভাটার মধ্যে দুটি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের আদালত এক রিটের প্রেক্ষিতে এ স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ইটভাটায় উপস্থিত হয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নোটিশ জারি করেন। গত ৮ এপ্রিল সোমবার বিকেলে এ নোটিশ জারি করা হয়।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিব ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ আমজাদ হোসেন এ নোটিশ জারির সময় সাথে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানষ চন্দ্র দাস এবং পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কার্তিক চন্দ্র দাস।
আদালতের দির্দেশনা অমান্য করে নোটিশ জারির পর দিন ভোর থেকে পুনরায় কাজ শুরু করেন ইটভাটার মালিক পক্ষ। আদালতে বাদী হয়ে এলাকা বাসীর পক্ষে রিট পিটিশন দুটি দায়ের করেন মোহাম্মদ আলী (এমডিএবি) ব্রীকসের বিরুদ্ধে আমির হামজা এবং হাজী লিটন ব্রীকসের বিরুদ্ধে মোঃ সেলিম।
অবৈধ ইটভাটা দুটি হচ্ছে- উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর নেয়ামত গ্রামে মোহাম্মদ আলী (MDAB) ব্রীকস্ এবং চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে চর পোড়াগাছা গ্রামে স্থাপিত হাজী লিটনের ইটভাটা।
রিট সূত্রে জানা যায়, বেআইনি ভাবে স্থাপিত ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) এর ধারা ৪,৪কা, ৬, ৮ (৪) (কা) ও (খা) আইন ২০১৩ বিধান লঙ্ঘন করে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে আমির হামজা গত ১২/৩/২০২৪ তারিখে ৩১১২/২০২৪ নম্বর পিটিশন দায়ের করেন প্রাথমিক শুনানি শেষে ২৪/৩/২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের সুপ্রিম কোর্টে (বিশেষ মুল বিচার বিভাগ) বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের আদালত ইটভাটা কেন সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন এবং ভাটা নির্মাণে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
বিধির শুনানির মুলতুবি থাকা অবস্থায়, উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নে চর নেয়ামত গ্রামের মোহাম্মদ আলী (এমডিএবি) নামে ইট তৈরি এবং ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য পক্ষ গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই বিধানে অপর ইটভাটা চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের চর পোড়াগাছা গ্রামে স্থাপিত হাজী লিটনের ইট ভাটার বিরুদ্ধে করা ১১/৩/২০২৪ তারিখের ৩০৫৫, ২০২৪ রিট পিটিশন শুনানি অন্তে ১৪/৩/২০২৪ একই আদালতে উভয় বিচারপতিগন একই আদেশ দেন। এসময় আদালত প্রদত্ত স্থগিতাদেশ অবহিতকরণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ৮ এপ্রিল সোমবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসন আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রদক্ষেপ নেন এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে উভয় ইটভাটায় সাইবোট টানিয়ে নোটিশ জারি করেন। এসময় মালিক পক্ষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ভোর থেকেই মোহাম্মদ আলী (এমডিএবি) ইটভাটার মালিক আদেশ অমান্য করে পুনরায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অপর ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, ইট ভাটার মালিকগুলো অনেক ক্ষমতাধর।একদিকে অভিযান হচ্ছে অন্যদিকে ইট উৎপাদন হচ্ছে। অদৃশ্য কারণে একটি অবৈধ ইট ভাটাও বন্ধ হয়নি। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত চিমনি ভেঙ্গে দেওয়ার কয়েক ঘন্টার পর আবার সেই চালু হয়ে যায় অবৈধ ইট ভাটাগুলো। আগে ১৫-২০ অবৈধ ইটভাটা ছিল, বর্তমানে একগ্রামে ২৩টি ইটভাটা এবং উপজেলায় ৪০টির উপরে।বাংলাদেশের কোন উপজেলায় একসাথে এত ইটভাটা নেই। এভাবে চলতে থাকলে উপকূলের ভবিষ্যৎ কি? প্রশাসন সত্যিই কি পারেন না এ অবৈধ কার্যক্রম থামাতে? আমরা ইট পোড়া গন্ধ ও ধূলা মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঁচতে চাই।
নির্দেশনা অমান্য করে ইটভাটা চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটার মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, রামগতিতে ৪০ টির বেশী ইটভাটা রয়েছে কোনটাই তো অসুবিধা হচ্ছে না। ইট ভাটাটি ৪ একর ৮০ শতক জমির উপরে নির্মিত। ইটভাটা করতে গিয়ে তিনি প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এখনও এক রাউন্ড ইটও বাহির করতে পারেননি তিনি। এই মুহূর্তে ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে দায়দেনা কার মাথায় দেব। এখানে যত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় সব টাকাই ধার দেনা করে করেছেন তিনি। তাছাড়া তিনি আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে একটি জবাব তৈরি করেছেন, কোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন। কোর্ট খোলা হলেই জবাব দিবেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে উভয় ইটভাটায়কে সাইনবোর্ড টানিয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এখন কেউ যদি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাহলে এর দায়দায়িত্ব সেই বহন করবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে থানা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মিসু সাহা নিক্কন/বার্তা-04-24
0Share