লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে ১৫ কিলোমিটার পাকা ও ২৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে বাঁধ তালিয়ে গেছে আবার কিছু জায়গায় আশঙ্কাজনকভাবে ভেঙ্গে গেছে। এবং কয়েকটি সেতু-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে ১৩০ টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং ২৬টি মাছ ধরার নৌকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়িসহ প্রায় ৩৭৫ হেক্টর ফসলি জমি। এ ছাড়া অসংখ্য গাছপালা ভেঙেছে।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, কৃষি কর্মকর্তা ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বড়খেরী, চর গাজী, চর রমিজ, চর আলগী, চর আলেকজান্ডার ও চর আবদুল্যা ইউনিয়নে। এসব ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। প্রায় ৪শত হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ফসলি জমি। অস্বাভাবিক জোয়ারে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৩০টি পুকুরের দেশীয় প্রজাতির প্রায় ৫২ টন মাছ ভেসে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের বেহাল অবস্থা। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হাঁটা-চলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোর মধ্যে দরবার রোড, রশিদিয়া রোড, রহমত সুয়া রোড, আবদুল খান ডিসি রোড, চর গোসাই রোড , সাহাব উদ্দিন কোয়েলপাড়া রোড ও মধ্য চর আলগী রোড বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক ও সেতু-কালভার্ট দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এবং সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে পাকা সড়কগুলোয় বড় বড় গর্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং ও খোয়া ওঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উপজেলা সদর কিংবা জেলা শহরে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কগুলো এবং কয়েকটি সেতু-কালভার্ট জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধের ৮টি স্থানে বাঁধ তালিয়ে গেছে আবার কিছু জায়গায় আশঙ্কাজনকভাবে ভেঙ্গে গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য (লক্ষ্মীপুর-৪) আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল-মামুন এমপি বলেন, আমি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে রামগতি বাজার সংলগ্ন বেড়ীবাঁধে সরেজমিনে গিয়েছি। দ্রুত বাঁধের কাজটি সংস্কার করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তগুলোকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজ-কালভাট ও সড়কগুলো সংস্কার করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, বরাদ্দ আসলে দ্রুত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেওয়া হবে।
মিসু সাহা নিক্কন/বার্তা
0Share