পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বাদ মাগরিব লক্ষ্মীপুর জেলা বিভিন্ন মসজিদসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
শুধু মুসলমান নয় সকল মানুষের কাছে দিনটি স্মরণীয়। ইতিহাসে বিশাল জায়গা দখল করে আছে পবিত্র আশুরা দিবস।পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়বিদারক স্মরণীয়। আর তা হলো, এদিনে স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণাধিক দৌহিত্র অকুতোভয় সৈনিক হযরত ইমাম হোসাইনকে (রা.) একজন ব্যতিত সপরিবারে কারবালার মরুপ্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত ইমাম হোসাইন ক্ষমতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি। বরং তিনি লড়াই করেছিলেন ইয়াজিদের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন ইয়াজিদ ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে এবং কোরআন হাদীসকে উপেক্ষা করে মনগড়া পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ফলে ইমাম হোসাইন (রা.) আশঙ্কা করেছিলেন আল্লাহর আইনে পরিচালিত খেলাফত পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে মনগড়া স্বৈরতান্ত্রিক রাজত্ব কায়েম হবে। পরবর্তীতে তাই হয়েছে।ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন, সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তিনি সপরিবারে জীবন দিয়ে শাহাদাত বরণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। আজো কেউ যদি পাশ্চাত্য সভ্যতার হিংস্র থাবা ও আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনে পরিচালিত রাষ্ট্রশক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন বিলিয়ে দেন। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর উত্তরসূরী হিসেবে শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে বেহেশত লাভ করবেন।মহান আল্লাহতায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরছি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে আল্লাহ প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয়শত বছর ধরে তাওহীদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধি নিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হযরত নূহ (আ.) এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। শুধু রক্ষা পেয়েছে তাওহীদে বিশ্বাসী নূহ (আ.) এর অনুসারী বৃন্দ।
পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) শত বিধি নিষেধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এবং নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নামে জবেহ করতে উদ্যত হলে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে।
এদিনেই হযরত আইউব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রে শিকার হলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন।
এদিনেই হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন, হযরত সোলেমান (আঃ) তার হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, হযরত ইয়াকুব (আ.) তার হারানো পুত্র হযরত ইউসূফকে (আ.) চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন।
পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মুসাকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার স্বীয় কওমের লোকজনসহ হযরত মূসা (আ.) লীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি লাভ করেন। পক্ষান্তরে ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়। পবিত্র আশুরা সমগ্র জগৎ সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমনি স্বীকৃত তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এদিনে এমনি আরো বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং আরো হবে।
এদিন উপলক্ষে রোজা পালন করার কথা বলেছেন রাসূল (সাঃ)। এদিনে কুরআন তেলাওয়াত ও আলোচনার আয়োজন করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়। যাতে ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের বদৌলতে আল্লাহ গোটাবিশ্বে ইসলামী শাসন কায়েম করার ব্যবস্থা করে দেন।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্র অফিস সমূহে ছুটি।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্র প্রধানগণ পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা ইমাম হোসাইনসহ কারাবালার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
0Share