ট্রাক চালক হাসেম (৫০) জানান, গত সোমবার চট্টগ্রাম থেকে ১৫টন চাউল নিয়ে হাজিরহাট গুদামের সামনে এসে ট্রাক থামানোর পর শুক্রবার পর্যন্ত ট্রাকটি খালি হয়নি। এক ট্রাকে চালকসহ তারা ৩ শ্রমিক। আজাদ (৪৫), সাত্তার (৪৫)সহ অন্তত আরো ১৫জন ট্রাক চালক জানান, গুদামের সামনে আসতে নিরাপত্তা রক্ষীরা জানিয়ে দেয় গুদাম খালি নেই। অপেক্ষা করতে হবে।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা শহর হাজিরহাট বাজারে অবস্থিত খাদ্য গুদামের সামনের দৃশ্য এটি। শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় খাদ্যবাহী অনন্ত ২০টি ট্রাক আনলোডের জন্য অপেক্ষা করছে। এসময় ট্রাক শ্রমিকরা জানান, ২০টি ট্রাকের প্রায় ৫০জন শ্রমিক গত ৩দিন যাবত খেয়ে না খেয়ে সীমাহীন কষ্টভোগ করছে। তারা জানেনা কখন ট্রাক খালি হবে ?
অন্যদিকে জেলার রামগতি,লক্ষ্মীপুর সদর এবং রায়পুর উপজেলায় একই রকম খবর পাওয়া গেছে। পূর্বে থেকে থাকা ধান, করোনার সময়ে বিশেষ বরাদ্ধ, ভিজিডি, ভিজিএফ ইত্যাদি বাবত বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও শস্য মজুদ থাকায় লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ খাদ্যগুদামের সামনে এ রকম ট্রাক ঝটের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তারা জানান, ঠিকাদারা না জানিয়েই এক সাথে এত চাউল পাঠিয়েছে। এখন গুদামে থাকা ধান চাউল খালি করে নতুন চাউল গুদামে ঢুকানো হবে এবং আমরা সেটাই করছি। তিনি আরো জানান, এ মুহুর্তে জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত বিপুল পরিমাণ চাউল বের করতে পারলেও গুদাম খালি হবে। আগামি ২-৩ দিনের মধ্যে ট্রাকগুলো খালি করা হবে।
ট্রাক চালক সহিদ (৪৬) জানান, করোনাভাইরাসের কারণে খাবার দোকানগুলোও খোলা নেই। মাল আনলোডও হচ্ছে না। আমরা না পারি খেতে, না পারি ঘুমাতে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা তারেকুল আলম জানান, কমলনগরে ৫টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে একটি প্রায় পরিত্যক্ত। অন্য ৪টিতে ২ হাজার টন খাদ্য শস্য রাখা যায়। বর্তমানে ৩টি গুদামে ধান ও চাউলে ভর্তি। এখন ধান বের করে ট্রাকে আসা চাউল গুলো আনলোড করা হবে। তাছাড়া ঠিকাদাররা চট্টগ্রাম থেকে এক সাথে এতগুলো মাল পাঠিয়ে দেয়ার কারণে এ ঝট সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো জানান, করোনার সময়ে বিশেষ বরাদ্ধ, ভিজিডি, ভিজিএফ ইত্যাদি বাবত বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। ঈদের আগে অনেকগুলো বিতরণ করা হবে। তাছাড়া এ উপজেলায় জেলেদের প্রায় ৩শ টন চাউল বরাদ্ধ আছে। সেগুলো বের করতেও গুদাম খালি হবে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মৎস্য বিভাগের চাহিদাপত্র পেলেই আমরা গুদাম খালি করতে পারি।
অন্যদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: বিল্লাল হোসেন জানান, জেলার ৫২ হাজার ২শ ৫০জন কার্ডধারী জেলের মধ্যে এপ্রিল-মে মাসের বরাদ্ধ বাবত ২৭ হাজার ৩শ ৪৪জনের ২১শ ৪০ টন খাদ্য বরাদ্ধের চাহিদা দেয়া হয়েছে। আগামি রবিবারের মধ্যে তা অনুমোদন হলে বিতরণ শুরু হবে। তখন গুদামগুলো খালি হবে।
0Share