নিজস্ব প্রতিনিধি : ঐতিহ্যবাহী ও শতাব্দীর প্রাচীন জনপদ হল লক্ষ্মীপুরের সীমান্ত সংলগ্ন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের ভবভদ্রী গ্রাম। শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতির চরণ ক্ষেত্র ‘‘ভবভদ্রী’’ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ভবভদ্রীর সেই রূপ আজ আর নেই। রূপ সৌন্দর্য হারিয়ে শ্রীহীন জনপদে পরিণত হয়ে পড়েছে এই গ্রামটি। এই গ্রামে নীতি নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ড এবং অসামাজিক কার্যকলাপ দিনকে দিন বাড়ছে। ভয়াল মাদকের আগ্রাসী থাবায় সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী ভবভদ্রী ‘প্রায় বিপন্ন’ জনপদে পরিণত হয়ে পড়েছে।
সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখানে মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে । এখানকার মাদবসেবীদের কাছে ‘‘ইয়াবা’’ এখন হট কেকের মতো।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেদারসে চলছে ইয়াবা বেচাকেনা। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাদক পাচার ও বিক্রি বন্ধে তৎপর থাকলেও মাদক বেচাকেনা থেমে নেই। মাদকের সহজলভ্যতা, অপেক্ষাকৃত কম দাম এবং পুলিশী ঝুঁকি কম থাকায় বিক্রেতাও সেবনকারীরা ইয়াবা বড়ির নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মাসিক চুক্তির বিনিময়ে মাদক বেচাকেনায় সহযোগিতা করছে। এই গ্রামটি নোয়খালী ও লক্ষ্মীপুর এই দুই জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গ্রামটিকে তাদের নিরাপদ ব্যবসার স্থান হিসেবে বেচে নিয়েছে।
মূলত লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার চন্দ্রগঞ্জ বাজারকে টার্গেট করে এখানে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সকাল দশটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত চলে ইয়াবা বিক্রির মহোৎসব।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইয়াবা বিক্রি আরম্ভ করে ভবভদ্রী গ্রামের মৃত আবুল বাসারের ছেলে মাসুদ ও আবুল কাশেমের ছেলে সেলিম। গত ২ বছরের ব্যবধানে বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ মাসুদকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে একবার। পাশাপাশি চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ মাসুদকে ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির টাকাসহ দুইবারই গ্রেপ্তার করেছে। সম্প্রতি ইয়াবা বিক্রেতা সেলিমও লক্ষ্মীপুর জেলা ডিবি পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। তখন থেকে ইয়াবা সিন্ডিকেটের একক নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় তারই সৎভাই মাসুদ। বর্তমানে তার নিয়ন্ত্রিত ইয়াবা বিক্রেতা রয়েছে আরও ৩ জন। এ সব চিহ্নিত ইয়াবা বিক্রেতা ও সেবনকারীদের বিশ্বস্থ সহচর হিসেবে ইয়াবা ও গাজাঁ আনা- নেয়া করছে রিক্সা চালক রুবেল।
এদিকে পুলিশের সোর্স স্বপনের সাথে সুম্পর্ক থাকার কারণে ভবভদ্রী গ্রামের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি মুক্ত। যে কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখনো অধরা। পাশাপশি চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজারস্থ বড়পোল সংলগ্ন বেদে বস্তির চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানে রয়েছে ইয়াবা ও গাজাঁ বিক্রেতা একজন নারীসহ ৫ জন চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। মাদক আগ্রাসনের কারণে ভবভদ্রী গ্রামের দুইটি পরিত্যাক্ত বাড়িকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ‘‘সেক্স প্লেস বৌগ্গার ছাড়া’’।
বিস্তৃত আয়তনের দ্ইুটি পরিত্যক্ত বাড়ি মিলিয়ে অপরাধীরা গড়ে তোলে তাদের নিরাপদ আস্তানা। একটি হল মৃত আবদুর রব হাজীর পরিত্যাক্ত বাড়ি। অপরটি হল বৌগ্গার ছাড়া। সেখানে দিনের বেলায় চলছে মাদক সেবন ও বিক্রি। একই সাথে চলছে তাসখেলা । পাশাপাশি যৌনকর্মীরা নারীলিসুদের পুসলিয়ে নিয়ে যায় সেখানে। ওখানে যৌন কর্মীদের সাথে যোগসাযোশে ওঁতপেতে থাকা অপরাধী চক্র খদ্দেরকে মারধর করে পুুলিশের ভয় দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, মোবাইলসেটসহ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। রাতভরও সেখানে চলে দেহ ব্যবসা। শুধু তাই নয়, ইয়াবা পল্লী নামে পরিচিতি ভবভদ্রী গ্রামের আমির উদ্দিন মুন্সি বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী মোখলেছ ভূঁইয়া বাড়ির দরজাসহ ৫টি মাদক স্পট এখন চেনা-অচেনা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তবে এই গাঁওকে নিয়ে এখনো অনেক স্বপ্ন আাঁকেন শিক্ষানুরাগী ও প্রাণবন্ত মহৎ ব্যাক্তিত্বরা।
0Share