নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার মান্দারীতে যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করার অভিযোগ হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ঠুনকো অভিযোগ সাজিয়ে এলাকার নিরীহ লোকজনদেরকে হয়রানি ও পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন হুমায়ুন। এতে তার সহযোগীরাও হয়ে উঠছে বেপরোয়া। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, মান্দারী পূর্ব বাজার ও মটবি গ্রামের নতুন আতঙ্ক এখন ‘হুমা বাহিনী’। ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
সম্প্রতি মধ্যরাতে মটবি গ্রামে মাদকাসক্ত দলবল নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোঁড়া হয়। হঠাৎ এমন কান্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ইয়াবা সেবন করে দুই সহযোগীকে নিয়ে মান্দারীর পূর্ব বাজার এলাকায় এক প্রবাসীর স্ত্রীর বাসায় যায় হুমায়ুন।
এসময় গেইট খোলার জন্য তারা চিৎকার চেঁছামেচি করে। সুখের সংসার ভাঙার আশংকায় ওই নারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও শ^শুর বাড়ির লোকজনকে ঘটনাটি জানায়নি।
এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। এসময় তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মান্দারী পূর্ব বাজার ও মটবি গ্রামে নিরীহ মানুষের জমি দখল ও নতুন নির্মিত স্থাপনা থেকে চাঁদা দাবি করে আসছে হুমায়ুন। সম্প্রতি স্থানীয় কিবরিয়া মাস্টারের জমি দখলের পাঁয়তারা করে। দখলে নিতে না পেরে তার কাছ থেকে হুমায়ুন চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় কিবরিয়ার দায়ের করা মামলায় কারাভোগ করেন তিনি। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। একই এলাকার মাওলানা আবদুস সহিদের দ্বিতল ভবন নির্মানের সময় হুমায়ুন চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে এখন তার লোকজন ভাড়াটিয়াদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। ভাড়াটিয়ার ফ্ল্যাটে ঢুকে গৃহবধূকে জোরপূর্বক কু-প্রস্তাব দেয়। এতে ব্যর্থ হয়ে তাকে সম্মানহানীর হুমকি ধমকি দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মান্দারী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) রুহুল আমিন মুন্সির মাধ্যমে আবদুস সহিদ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে হুমায়ুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের দুইজন সদস্য (মেম্বার) বলেন, দলীয় নাম ভাঙিয়ে হুমায়ুন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে তিনি মান্দারী বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমানকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেন। বাহিনী গঠন করে মান্দারী বাজার ও মটবি গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। কোরবানির গরু বাজারকে কেন্দ্রে করে তার বাহিনীর সদস্য কবির মান্দারী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনকে গ্লাস ছুঁড়ে মারে। এসময় সমিতি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শনিবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে হুমায়ুন কবির ওরফে হুমার মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করলেও সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে তার বক্তব্য পাওয়া গেলে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মদদে লক্ষ্মীপুরে সদরের পূর্বা লে ২২টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। নিজেদের নামে বাহিনী গঠন করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, গোলাগুলি ও খুনোখুনিসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে একসময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাতি পায় লক্ষ্মীপুর। লাদেন মাসুম, জিসান ও শামীম বাহিনীতে সদস্য ছিল দুই থেকে তিনশ’।
এদের কাছে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ ছিল। সাম্প্রতিককালে পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় ওইসব বাহিনী প্রধান ও তাদের সহযোগীরা বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। অনেকেই এলাকাছাড়া, আবার অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করছে। তখন পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কঠোর তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল পূর্বা লের লাখো জনতা।
0Share