কাজল কায়েস: লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের অধীনে ২৪ হাজার ১১৭ জন রেজিষ্ট্রিকৃত রোগী রয়েছেন। ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের সদস্য হতে হয়েছে। আর এতেই চলছে আজীবন চিকিৎসা। এরপর থেকে শুধু রক্ত ও সুগার পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা করে ফি নেয়া হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীদের চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ হয় না। একবার সদস্য হলে পরবর্তীতে ১০০ টাকা দিয়েই চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্ত এটি নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত ওষুধ সেবন করতে হয়। সময়মতো ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। চিকিৎসা ও ওষুধ সেবন অব্যাহত না রাখলে চোখ-কিডনি ও হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। শিশুরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি প্রধানত তারাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার বারডেমের অধীনে পরিচালিত লক্ষ্মীপুরের এই হাসপাতালটিতে ২৪ হাজার ১১৭ জন রেজিষ্ট্রিকৃত রোগী রয়েছেন। গত ১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত এখানে মোট ১ হাজার ৭৭৩ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তারা জানান, এখানে প্রথমে ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। পরবর্তীতে সুগার ও রক্ত পরীক্ষায় ১০০ টাকা করে ফি নেয়া হয়। শতকরা ৩০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর আওতায় সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনে ৬৬ জন রোগীকে বিভিন্ন হারে ছাড় দেয়া হয়। এরমধ্যে শতভাগ ফি মুক্ত ১৩ জন, ৮০ শতাংশ ফি মুক্ত ৫ জন, ৭৫ শতাংশ ফি মুক্ত ২৫ জন ও ৫০ শতাংশ ফি মুক্ত ২২ জন রয়েছেন। এসব রোগীকে পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশসহ ঢাকায় গিয়ে বারডেম হাসপাতালে থেকে অনুমোদন আনতে হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। ২০১৫ সালে জেলা শহরের উত্তর মজুপুর এলাকায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে সরকারিভাবে ৭০ শতাংশ ও সমিতির সদস্যরা ৩০ শতাংশ অর্থ দিয়েছেন। এখনো হাসপাতালের পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সম্পূর্ণ শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। এখানে ডায়াবেটিস, দাঁত ও ফিজিওথেরাপী বিভাগ চালু আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন তার মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য ডায়াবেটিক সমিতির উদ্যোগ নেন। বর্তমানে তিনি জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। দেলোয়ারসহ ২৫ জন ব্যক্তির সমন্বয়ে ১৯৮৭ সালে লক্ষ্মীপুরে ডায়াবেটিক সমিতি গঠিত হয়।
জানতে চাইলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শিখা রাণী জানান, ৮ বছর হয়েছে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমে এক হাজার ৯০০ টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এরপর থেকে ১০০ টাকা দিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখানে শতকরা ৩০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া গরীব রোগীদেরকেও বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছি। অনেকেই নির্ধারিত ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। তাদের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দেয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের কনসালটেন্ট মো. বেলায়েত হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবন করতে হবে। এর থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে হবে। রোগীদেরকে খাবারের বিষয়েও সচেতন হতে হবে।
এদিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সমিতির নেতা, হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের উপস্থিতি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
0Share