রায়পুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পরিবহন খাতে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। উপজেলা ছাড়াও জেলার পাঁচ উপজেলাগুলোর অর্ধশত টার্মিনালে বাস, ট্রাক, সিএনজি ও অটোরিকশার স্ট্যান্ডগুলোতে হচ্ছে এই চাঁদাবাজি। শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতি মাসে পরিবহন খাতে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে
বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতা থেকে পাতি নেতাও রয়েছে চাঁদাবাজির এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটে। যানবাহনের চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়। বরং চলাচলকারী সব গাড়িকে প্রতি ট্রিপেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা পরিশোধের পর টার্মিনাল ছাড়তে দেওয়া হয়।
এক কথায় সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে রায়পুরসহ জেলার পরিবহন খাত। প্রকাশ্যে এ সব চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন অনেকটা নির্বিকার। চলতি বছরের জুন মাসে সারাদেশে যত্রতত্র পরিবহনের চাঁদা আদায় বন্ধ করতে কুষ্টিয়া জেলার ট্রাক মালিক সমিতি আবেদনকারী হিসেবে একটি রিট পিটিসন দায়েরের প্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে বধুবার (৩১ অক্টোবর-১৮) রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ কয়েকজন নেতাকে ডেকে পরিবহন থেকে চাঁদা না তুলতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিবহন খাতের মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রায়পুরসহ জেলার প্রায় ১৫ হাজার পরিবহন চলাচল করছে। আর প্রতিটি স্ট্যান্ড ঘিরে রয়েছে শ্রমিক সমিতি কিংবা মালিক সমিতির নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন। আর ওই সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে থাকছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা। এদের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট।
আবার প্রতিটি স্ট্যান্ডেই রয়েছে ওই সিন্ডিকেটের নিয়োগপ্রাপ্ত লাইনম্যান। সিএনজি, অটোরিকশা, বাস কিংবা ট্রাক থেকে ওই লাইনম্যানের হাতেই নির্ধারিত অংকের চাঁদার টাকা আদায় হচ্ছে প্রতিদিন। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে সিএনজি ও অটোরিকশা। প্রতিটি বাসের শেষ কিংবা শুরুর গন্তব্যে চলে ওয়েবিল কিংবা শ্রমিক উন্নয়নের নামে চাঁদাবাজি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাস ও সিএনজি চালক বলেন- রুটে চলাচল করতে হলে শুরুতেই এককালীন চাঁদা দিতে হয় ২ হাজার – ৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয় ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। চাঁদা না দিলে চলাচল করতে পারবে না গাড়ী। টোকেনের মাধ্যমেও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নিয়মিত হারে চাঁদা দিতে গিয়ে অনেক পরিবহন লোকসানের মুখে পড়েছে। অনেক পরিবহন বন্ধও হয়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ পরিবহন মালিককে এভাবে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে- রায়পুরসহ জেলার সদর, রামগতি, রামগঞ্জ, কমলনগর ও চন্দ্রগঞ্জ বাজার স্ট্যান্ডে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি চলছে প্রকাশ্যে। চাঁদাবাজির বড় স্ট্যান্ড হচ্ছে- রায়পুর বাস টার্মিনাল, হায়দরগঞ্জ সড়কে পাউবোর সামনের স্ট্যান্ড, রায়পুর চাঁদপুর সড়কে বড় মসজিদ সংলগ্ন, পীর ফজলুল্লাহ সড়ক সংলগ্ন, কাফিলাতুলি সড়ক, বাসাবাড়ী থেকে হায়দরগঞ্জ সড়ক, পাটোয়ারী রাস্তার মাথা থেকে খাসেঁরহাট সড়ক, হাজীমারা সুইজগেইট থেকে মোল্লারহাট ও সদর, রায়পুর-পানপাড়া-রামগঞ্জ সড়ক স্ট্যান্ড এবং উত্তর তেমুহনী, দক্ষিণ তেমুহনী, ঝুমুর সিনেমা হল সংলগ্ন, মজুচৌধুরীর হাট ফেরী ঘাট স্ট্যান্ডসহ অর্ধশত স্ট্যান্ডে সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন খাত।
জেলা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সর্পোট অথরিটি তথা বিআরটিএর নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জেলায় মোট সিএনজি আটোরিকশার রেজিস্ট্রশন দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। বাকী কয়েক হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে স্ট্যান্ড কমিটিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে। এ সব অবৈধ সিএনজিদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট মোঃ সালাহ্ উদ্দিন রিগ্যান বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে সারাদেশে যত্রতত্র পরিবহনের চাঁদা আদায় বন্ধ করতে কুষ্টিয়া জেলার ট্রাক মালিক সমিতি আবেদনকারী হিসেবে একটি রিট পিটিসন দায়ের করেন (যার নং-৯৬৩৭/২০১৮)। মামলার শুনানির পর গত ২৪ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ ও নির্দেশের পরও রায়পুর উপজেলা ও পৌরসভায় বাস ও ট্রাক ষ্টেশনের বাহিরে বিভিন্ন সড়কে ও সড়কের উপর রাখা সিএনজি থেকে দৈনিক ৯০/১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। যাহা সম্পূর্ন উচ্চ আদালতের আদেশ ও নির্দেশের পরিপন্থি।
উল্লেখ্য রায়পুর থানার সামনে সড়কের দু’পাশ বাস ও ট্রাক ষ্টেশনের আওতামুক্ত এমনকি পার্কিং এর মধ্যে পড়ে না। তাই সাত দিনের মধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার সড়কের সকল ধরনের চাঁদা আদায় বন্ধে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রায়পুর থানার ওসি একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, সারাদেশে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আমার কাছে চিঠি আসায় পরিবহন খাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের থানায় ঠেকে আদালতের নির্দেশনা দিয়ে মোবাইলকোট পরিচালিত হয়েছে।
0Share