লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক ইউপি মেম্বার দরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড আত্মসাত করে চাল অন্যত্র বিক্রি করছেন। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে সোনাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কার্ডধারী আবদুল হান্নানের স্ত্রী রোজিনা বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
কার্ড আত্মসাৎ করে গত এক বছর ধরে হান্নানকে চাল না দেওয়ায় ডিলারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়। জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ও রায়পুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহবায়ক।
তিনি সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ জালাল কিসমতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মামুন খাদ্য অফিসের আওতাধীন সোনাপুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ডিলার। এই ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৪৮৪ জন কার্ডধারী রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ডিলার মামুন অসহায় মানুষগুলোর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডগুলো কৌশলে রেখে দেন। এরপর কার্ডগুলো ফিরিয়ে দেন না। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাল না দিয়ে ৪০০ টাকা লাভে অন্যত্র বিক্রি করে দেন। আবার খাদ্য অফিসের তত্ত্ববধানে থাকা গোডাউনে না রেখে নিয়মবহির্ভূতভাবে চাল অন্যত্র রাখেন এই ডিলার। ইতিমধ্যে সোনাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে ৭০০ টাকা ধরে দুই বস্তা চাল বিক্রি করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর জানান, এই মাসে তিনি চাল কেনেননি। গত মাসে তিনি চালের জন্য টাকা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, সোনাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কার্ডধারী ফিরোজ আলমের স্ত্রী নূরের নাহার, বকুল মেস্ত্রি, ইউনুছ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন, ছফি উল্যার ছেলে মো. হারুন, আবদুল লতিফের ছেলে নির্মাণ শ্রমিক আবদুল হান্নান ও আবুল হোসেনের ছেলে সবুজ হোসেনসহ অন্তত ১০ জন গত কয়েক মাস চাল পাচ্ছেন না।
এরমধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বকুল মারা যান। এরপর তার মেঝো ছেলে বোরহান দুই মাস চাল উত্তোলন করেছেন। পরে তার কার্ড রেখে দিয়ে আর চাল দেওয়া হয়নি। এছাড়া সবুজ হোসেন পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। গত এক বছর তিনি চাল উত্তোলন করতেও আসেনি। কিন্তু তাদের কার্ডে প্রতিমাসেই চাল উত্তোলন দেখাচ্ছেন ডিলার মামুন। চাল না পওয়ায় আবদুল হান্নানের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, ২০১৯ সালের প্রথম দিকে তারা কার্ডের আওতায় এসেছেন। এরমধ্যে ২ মাস তাদেরকে চাল দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ডিলার তাদের কার্ড রেখে দিয়ে আর চাল দিচ্ছে না।
অন্যরা পেলেও তারা চাল আনতে গেলে বারবার ফিরে আসছে। তিনি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মৃত বকুল মেস্ত্রির মেঝো ছেলে বোরহান বলেন, আমার বাবা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারা গেছেন। এরপর আমাকে দুই মাস চাল দিয়েছেন। পরবর্তীতে কার্ডটি রেখে দিয়ে আমাকে আর চাল দিচ্ছে না।
শুনেছি আমাদের কার্ডের চাল নিয়মিত উত্তোলন হচ্ছে। নূরের নেহার বলেন, মার্চ মাসে চাল দিয়ে ডিলার আমার কার্ড রেখে দিয়েছে। এই মাসের চাল নিতে গেলে ডিলার জানিয়েছে, চাল শেষ হয়ে গেছে। এজন্য আমাকে দেয়নি। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, কার্ডধারী প্রায় ২০ শতাংশ লোক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কিনেন না। গ্রাহকদের কার্ড রেখে দিয়ে ডিলার মামুন সেসব চাল ৭০০ টাকা ধরে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়।
পরবর্তীতে মাস্টাররুলে কার্ডধারীদের কাছে চাল কার্ডধারীদের বিক্রি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অভিযুক্ত ডিলার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৪৮৪ জন কার্ডধারীকেই চাল দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবে।
সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করার মত কিছুই নেই। সোনাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউসুফ জালাল কিসমত বলেন, এ ব্যাপারে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাটি আমি খতিয়ে দেখবো। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরী বলেন, ডিলার মামুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share