এম,আর সুমন, রায়পুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় দিনে ও রাতে তীব্র লোডশেডিং চলছে। পৌর শহরের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও শহরের বাইরে ও ১০টি ইউনিয়নে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই থাকছে বিদ্যুৎবিহীন। এ কারণে তীব্র গরমে লোডশেডিং চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এই পরিস্থিতিতে কার্যালয়গুলোতে গ্রাহকদের হামলার আশঙ্কা করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা। সমিতির পক্ষ থেকে সহযোগিতা চেয়ে রায়পুর থানা-পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম শাহাদাত হোসেন বলেন, হঠাৎ লোডশেডিং চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রচ- গরমে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় গ্রাহকদের ক্ষোভ থেকে সংস্থার কার্যালয় ও স্থাপনা রক্ষার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ মোট গ্রাহক ৯৮ হাজার ৮৫৬ জন। মোট এক হাজার ৩১৮ কিলোমিটারে আবাসিক ৭৯ হাজার ৯২২ এবং বাণিজ্যিক গ্রাহক সাত হাজার ৬৩৯ জন। কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৯৫ জন। ১২টি ফিডের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে সঞ্চালন লাইন। ৩০ জন লাইনম্যান প্রতিদিন গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে ১২ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে দেওয়া হচ্ছে পিক আওয়ারে ৮ মেগাওয়াট। আর অফ পিক আওয়ারে ৫ মেগাওয়াট। এ অবস্থায় উপজেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকে। একেকটি শাখা লাইনে গড়ে ১৫-১৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে কবে সমস্যা কমবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা নেই।
শহরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আট ঘণ্টাও ঠিকমতো বিদ্যুৎ পান না তাঁরা। বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখতে হচ্ছে। উপজেলা ও গ্রাম এলাকার তুলনায় পৌর শহরের অবস্থা কিছুটা ভালো। শহরের প্রতিটি এলাকায় কমবেশি লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলার বাসিন্দারাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রামগুলোতে গড়ে ১৫-১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ-সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে এডিজিএম মো. মামুনুর রহমান বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কী কারণে সরবরাহ কম, তা তাঁরাও জানেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়–য়া বলেন, প্রতিদিনই বিদ্যুতের খুঁটিনাটি সবকিছুর খবর রাখা হচ্ছে। এনিয়ে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিভ্রান্ত ছড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ নিয়ে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান ওসি।
প্রসঙ্গত- ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে বিদ্যুতের দাবিতে রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে একটি পিকআপ ও ছয়টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিক্ষোভকারীরা লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কে তিনটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে এবং চারটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। তিন দিন ধরে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন চললেও বিদ্যুৎ কার্যালয় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা ছিল না। সারা রাত গাড়িগুলো জ্বললেও কেউ তা নেভাতে এগিয়ে আসেনি।
0Share