তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর: “রায়পুরে রাতের আধারে সরকারী গাছ কেটে নিল ছাত্র ও যুবলীগ ক্যাডাররা” এ শিরোনামে সোমবার লক্ষ্মীপুরটুয়েন্টিফোর ও দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় বন কর্মকর্তা মঙ্গলবার নিজেই তার সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকারয় সরজমিনে তদন্ত শুরু করেছেন বলে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবিদককে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে রায়পুরে বন ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জসিম মুন্সীর বিরুদ্ধে সরকারী প্রায় ৭০টি গাছ কেটে তা বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে ওই কর্মকর্তা নিজেই তা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও উপজেলার করাতকলগুলো পুনঃরায় নবায়নের নামে ৫৪ মালিকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। করাতকল মালিকরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন করাতকল মালিকরা। কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তার অফিসের কর্মচারীরা ও স্বিকার করেছেন তবে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার ( ৬ মে) লেংড়াবাজার এলাকার ফিরোজ ট্রেডিং কর্পোরেশন ও করাতকলের মালিক মো. ফিরোজ আলম জানান, হায়দরগঞ্জ সড়কের সোলাখালী ব্রিজ সংলগ্ন জায়গা থেকে চারদিন আগে ২৫হাজার টাকা মুল্যের একটি আকাশমনি, পানপাড়া সড়কের প্রায় ৪০হাজার টাকা মূল্যের ১০টি মেহগনি ও আকাশমনি এবং চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা মুল্যের ১২টি রেন্ডি ও আকাশমনি এবং বামনী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের সড়কের পাশের ৫০ হাজার টাকা মুল্যের ২৫টি গাছ কেটে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। সেগুলো রাতের আধারে দালাল মান্নান পাটোয়ারী, ইব্রাহিম মেম্বার ও আনোযারুল হকের মাধ্যমে বিভিন্ন স-মিল ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এছাড়ও গত ১০-১২ দিন ধরে মোল্লারহাট এলাকার ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মীরা প্রায ১০ লাখ টাকা মুল্যের ৩০ টি গাছ রাতের আধারে কেটে নিয়ে যায়। ওই নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসী বন কর্মকর্তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এছাড়াও গত হরতাল-অবরোধের সময় উপজেলার বিভিন্নস্থানে সড়কগুলোতে কেটে ফেলা গাছগুলো গোপনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করেও তা আত্মসাত করেন।
ব্যবসায়ী ফিরোজ আলমসহ কয়েকজন করাতকল মালিক জানান, কয়েকদিন আগে তাদের করাতকলের কাগজপত্র নতুন করে নবায়নের নামে জন প্রতি ৩-৯ হাজার টাকা করে দেড় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। সরকারী নিয়মে প্রতি বছর করাতকল নবায়নের জন্য ৫’শ, ভ্যাটের জন্য ২’শ ও নতুন লাইসেন্সের জন্য ২ হাজার টাকা নেওয়া নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গত তিনমাস ধরে করাতকল মালিকরা তাদের কাগপত্র দেওয়া জন্য বন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে গেলেও দেই-দিচ্ছি বলে হয়রানি করছেন।
উপজেলা বন ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, তার বিরুদ্ধে করাতকল মালিকদের অভিযোগ সঠিক না। তাছাড়া তিনি কোন গাছ বিক্রির সাথে জড়িত না। সোমবার যুগান্তরে ‘রায়পুরে রাতের আধারে গাছ কেটে নিল ছাত্র ও যুবলীগ ক্যাডাররা’ এ সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পরেই তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। চরবংশী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন গাছকাটার ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
0Share