রায়পুর প্রতিনিধি: বিদ্যুৎ অফিসে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং এএসআই আব্দুল জলিল নিহতের ঘটনায় রায়পুর থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে আটক করেছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আটককৃতদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা জানায়।
শুক্রবার বিকালে রায়পুর থানার এসআই জহিরুল হক ও পল্লী বিদ্যুতের এজিএম (কম) মফিজ আহমদ কবির বাদী হয়ে এ মামলাগুলো করেন। পুলিশের মামলায় ৪০ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞতানামা ১হাজার’ এবং বিদ্যুতের মামলায় অজ্ঞাত ৬শ’ থেকে ৭শ’জনকে আসামী করা হয় বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে রায়পুরে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা সড়ক অবরোধ ও বিদ্যুত অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ রায়পুর আসে। রাত ১টার দিকে থানার সম্মুখে চায়ের দোকানে গুলিবিদ্ধ হন এএসআই আব্দুল জলিল। হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি সেখানে মারা যান। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। একই সময়ে বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে ৭টি মোটর সাইকেল, একটি পিকআপ ও ৩টি কক্ষ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় মামলা করে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সোলায়মান চৌধূরী বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা ও পল্লীবিদ্যুতের এজিএম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। দু’টি মামলায় আসামীর সংখ্যা প্রায় ৭শ’। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে শহরের বিভিন্নস্থানে সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে স্থানীয় জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ফোর্স হিসেবে লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুর আসেন এএসআই আবদুল জলিল। রাত ১টার দিকে রায়পুর থানা কার্যালয়ের মুল ফটকের বিপরীতে চা দোকানে তার ব্যবহৃত এসএমজি অস্ত্রটি পাশে রেখে চা খেতে বসেন। এ সময় অসাবধানতা বশত: তার হাতটি এসএমজির ট্রিগারে চাপ লাগলে গুলি বেরিয়ে এসে জলিলের শরীরের ডান পাশে বিদ্ধ হয়। তাকে দ্রুত লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
গ্রাহকরা জানায়, রায়পুরে প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৮ ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। যে সময়ে বিদ্যুৎ দেয়া হয় তখনও লো-ভোল্টেজ সমস্যা থাকে এবং ৮-১০ মিনিট পর পর লাইন ট্রিপ করে। এতে করে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিনস্ট হচ্ছে তাদের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী। ব্যহত হচ্ছে রায়পুর পৌরসভার ও মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। একাধিকবার আন্দোলন করার পর আশ্বাস দেয়া হলেও তার কোনো প্রতিফলন না ঘটায় গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
বিক্ষুদ্ধরা রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের রাখালিয়া, পাটওয়ারীর রাস্তার মাথা, বাসাবাড়ী, ভূঁইয়া রাস্তার মাথা, থানার ট্রাফিক মোড়, আলিয়া মাদ্রাসা মোড় ও লেংড়া বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় পুলিশ কোনো এ্যাকশানে না গিয়ে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
পল্লী বিদ্যুতের রায়পুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মাহফুজুর রহমান বলেন, পর্যাপ্ত বরাদ্ধ না পাওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৩টি অফিস কক্ষ, ৭টি মোটর সাইকেল ও একটি পিকআপভ্যান জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক আবুল বাশার বলেন, বিক্ষুব্ধদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ অফিসসহ শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বলেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
0Share