রায়পুর প্রতিনিধি: রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের এএসআই নিহত ও পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে দায়ের করা ৩টি মামলায় ‘গ্রেফতার’ আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। এদিকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গঠন করা ৩ সদস্যের কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শেষ করে গত সোমবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর ছেড়েছেন। তবে তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মাহফুজুর রহমান। পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবদুল জলিল গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন। কিন্তু গত ৬ দিনেও রহস্য উদঘাটিত হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত জব্দ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়পুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সোলেমান চৌধুরী তিনি বলেন, মামলার বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাচ্ছেনা।
পল্লী বিদ্যুৎ দুই মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ২ হাজার ১’শ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় বিল্লাল হোসেন নামের এক আসামি ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার পর থেকে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ লোকজনকে সন্ধ্যার পর রায়পুর পৌর শহরে তেমন দেখা যায় না। অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ থাকে। বিএনপি-জামায়াত নেকাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে শহরে রয়েছেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে রায়পুরের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। একপর্যায়ে তারা রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করে। এ সময় এ আন্দোলনকে পুঁজি করে দুষ্কৃতকারীরা পল্লী বিদ্যুতের ওই কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে কার্যালয়ের ৩টি কক্ষের মালামাল, একটি পিকআপ ভ্যান ও ৬টি মোটরসাইকেলে পুড়ে যায়। এ ঘটনায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আনা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ নাইন থেকে অতিরিক্তি পুলিশ। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ঘটনার রাত ১টার দিকে রায়পুর থানার মূল ফটকের কাছে রান্তার পাশে দেলোয়ারের চায়ের দোকানে গুলি বিদ্ধ হন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য আবদুল জলিল। পরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান। ঘটনার পরদিন শুক্রবার রায়পুর পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মফিজ আহমেদ কবির ও রায়পুর থানার এসআই জহিরুল হক বাদী হয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এতে ৪২ জনের নাম উল্লেখ ও আরো দুই হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এছাড়াও পুলিশের এএসআই আবদুল জলিল নিজের গুলিতে নিহতের ঘটনায় রায়পুর থানার এসআই জহিরুল হক গত শুক্রবার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়। গত শুক্র থেকে রোববার পর্যন্ত রায়পুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে ৩ জন এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছে। অন্যদের সন্দেহজনক হিসেবে আটকের পর বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ও পুলিশে কাজে বাধা দেওয়ার দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের অধিকাংশই নিরীহ লোকজন বলে জানায় এলাকাবাসী।
এদিকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গঠন করা কমিটির সদস্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোডের্র (কেন্দ্রীয় অঞ্চল) পরিচালক শাহনেওয়াজ খান, উপ-পরিচালক মতিউর রহমান, পলী বিদ্যুৎ বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে গত সোমবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর ছেড়ে গেছেন।
রায়পুর পৌর বিএনপি সভাপতি ও পৌর মেয়র এবিএম জিলানী জানান, নাশকতায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার না করে পুলিশ অন্যায়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। শনিবার রাতে রায়পুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাজিমুল ইসলাম নাজুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ হয়রানি এড়াতে দলের অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
রায়পুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাছেল বলেন, সাধারণ মানুষের আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি চক্র ওইদিন পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে নাশকতা চালিয়েছে। তারা বিগত দিনেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। তবে এ ঘটনায় কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি না করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রায়পুর থানার ওসি একেএম মঞ্জুরুল হক আকন্দ জানান, কাউকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুৎতের দু’টি মামলার তদন্ত চলছে। এছাড়াও শটগানের গুলিতে পুলিশ সদস্য জলিল নিহতের বিষয়টি ২-১ দিনের মধ্যে তদন্তে উদঘাটিত হবে বলে আশাবাদি তিনি।
0Share