সানা উল্লাহ সানু: ৯০ এর দশকের আগে ও পরে বাংলাদেশে স্কুল ও কলেজের এমন কোন ছাত্রছাত্রী নেই ( বিশেষ করে গ্রামের) যারা কাশেম বিন আবু বকরের লেখা উপন্যাস “ফুটন্ত গোলাপ” বা “বিদায় বেলা”বা “বোরকা পরা সে মেয়েটি” পড়েনি। কিশোর প্রেমকাহিনীর এ উপন্যাস গুলো ছাত্রছাত্রীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু তার লেখা একটি বই হাজারো পাঠকের হাত ঘুরলেও সে ঔপন্যাসিক কে নিয়ে বাংলাদেশী কোন মিডিয়ায় এক কলম লেখাও কখনো ছাপেনি। অনেক মিডিয়া তার নামও শুনেনি কখনো।
কিন্তু বাংলাদেশী মিডিয়ায় সে কোন স্থান না পেলেও আজ ( ২৬ এপ্রিল) বিশ্ব বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা এএফপিসহ বহু নাম করা মিডিয়া তাকে নিয়ে খুব আগ্রহ সহকারে ফিচার ছাপানোর পর চার দিকে যেন হৈচৈ পড়েছে। বিশ্ব মিডিয়ার এ আগ্রহে মনে হচ্ছে বাংলাদেশী ২য় ব্যক্তি হিসেবে খুব শীঘ্রই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন এ ঔপন্যাসিক।
বাংলাদেশে গ্রামীণ জনপথে অত্যন্ত জনপ্রিয় কিন্তু দেশী মিডিয়ায় বিমাতা শুলভ আচরণের শিকার ঔপন্যাসিক কাশেম বিন্ আবু বকর কে নিয়ে বিশ্বের যে সকল মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের পাঠকদের জন্য বিস্তারিত এ প্রতিবেদন।
আজ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন ঔপন্যাসিক কাশেম বিন্ আবু বকর।বিশ্ব মিডিয়া কাশেম বিন আবু বকর কে নিয়ে যে সকল প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তা এক নজরে দেখা যাক।
প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইয়াহু নিউজ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, মালয়েশিয়ার দ্যা স্টার ও মালয়মেইল, এশিয়ান এইজ পাকিস্তানের দ্য ডন, ফ্রান্সের ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, হাঙ্গেরির হাঙ্গেরি টুডেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে কাসেমকে নিয়ে ওই প্রতিবেদন ছেপেছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাসেম বিন আবুবাকার ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে একজন বই বিক্রেতা হিসেবে প্রায় সব উপন্যাসের মধ্যে শুধু শহুরে অভিজাতদের জীবনযাত্রার কথা দেখতে পেয়ে নিজেই হাতে কলম তুলে নেন। এরপর ১৯৭৮ সালে কাসেম তার প্রথম উপন্যাস ‘ফুটন্ত গোলাপ’ লেখেন। তবে ‘মোল্লার উপন্যাস বিক্রি হবে না’ বলে এটি প্রকাশকের নজর কারতে প্রায় এক দশক সময় লাগে। ওই প্রকাশকের কাছে মাত্র এক হাজার টাকায় এটির সত্বও বিক্রিও করে দেন তিনি। এরপর ইসলামী মূল্যবোধকে সামনে রেখে কাসেমের লেখা একের পর এক প্রেমের উপন্যাস প্রকাশিত হতে থাকে। এসব উপন্যাস দ্রুতই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লাখ লাখ পাঠকের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে তার উপন্যাস। এএফপিকে বাংলাদেশের সাংবাদিক কদরুদ্দিন শিশির বলেছেন, কাসেম বিন আবুবাকার এমন এক নতুন পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছেন, তার আগে যাদের অস্তিত্বের কথা কেউ ভাবেইনি। তিনি আরও বলেন, গ্রাম এলাকায় তরুণ প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাকে সেরা উপহার হিসেবে কাসেমের উপন্যাস দিয়ে থাকে। কাসেমের উপন্যাস মাদ্রাসা বা ধর্মীয় আবাসিক স্কুলের ছাত্রদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হওয়ার একটি ব্যাখ্যা এএফপির কাছে তুলে ধরেন সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ। তিনি বলেন, তারা কাসেমের গল্পের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। আর এসবের কাহিনী বিন্যাস এবং ভাষাও তাদের কাছে আরামদায়ক মনে হয় বলে পারভেজের মত।
এএফপি বলছে, স্যেকুলার লেখকরা এমন এক দুনিয়ার গল্প বলেছে, যেখান থেকে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রধান অংশের গ্রামীণ ও ধর্মীয় জীবনের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। কাসেম এই শূন্যতার বিষয়টি অনুধাবন করে তার উপন্যাসের বাজার গড়ে তুলেছেন। এছাড়া কাসেমের এ প্রচেষ্টা থেকে নতুন প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশী লেখক অনুপ্রাণিত হয়ে সমকালীন ‘ইসলামী উপন্যাস’ লিখে সাফল্যের পথ খুঁজে পেয়েছেন। এদের মধ্যে আবদুস সালাম মিতুল, কাউসার আহমেদ এবং আবদুল আলিমের মতো লেখক উল্লেখযোগ্য।
0Share