সারা দেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এ দিনে ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
এ উপলক্ষে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের খ্রিস্টান কলোনীতে অবস্থিত টুমচর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেন। ফুল, নানা রঙের বেলুন, নকশা করা কাগজ ও জরি ব্যবহার করে কয়েক দিন ধরেই সাধ্যমতো সাজানো হয়েছে পবিত্র গির্জা। শুধু গির্জাতেই নয়, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের মহল্লা এবং বাড়িতেও সাজ সাজ রব।
বড়দিনের প্রার্থনায় শরিক হয়েছেন উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নে বসবাসরত ১৩ পরিবারের ৪৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর। বাইবেল পাঠ, বানী প্রচার, ধর্মীয় গান, কেক কাটা, পৃথিবীর সকল জীবের শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোমবাতি প্রজ্জ¦লন, রঙিন কাগজ, ফুলসহ নানা আয়োজনে গির্জাকে সাজানো হয়েছে। এ উপলক্ষে গির্জাকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশু আজকের দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরাও তাই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করেছেন।
গির্জার সম্পাদক জুয়েল খ্রিস্ট দাস জানান, খ্রিস্টান কলোনীতে এই গির্জাটি ১৯৭৫ সালে স্থাপন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন থেকে আমরা এ অঞ্চলে বড়দিন পালন করে আসছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ হাজার কেজি চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এদিকে গতকাল রাতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয়ের পক্ষ থেকে আমাদের উৎসব ” বড়দিন ” উপলক্ষে শুভেচ্ছা উপহার হস্তান্তর করেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন।
পুলক রানী খ্রিস্ট জানান, গত কয়েক বছর থেকে আমরা ব্যাপকভাবে আমাদের বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপন করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও ২০০৮ সাল থেকে ব্যাপ্টিষ্ট এইড-বিবিসিএফ এর আওতায় টুমচর গ্রামীণ শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে অর্ধ শতাধিক শিশু লেখাপড়া করে আসছে। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ১০ জন শিক্ষার্থী বাকিরা এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী।
গির্জা পরিচালক (পালক) চন্দন খ্রিস্ট দাস বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিল। আর এ আগমন উপলক্ষে আমাদের এ আয়োজন। বড়দিনে প্রভুর শান্তির সেই বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সকলে বড়দিনের আনন্দে একি সহমর্মিতায় উপভোগ করবে প্রত্যাশা করছি। চার্চে সকালে প্রার্থনা, দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজ, সন্ধ্যায় ক্রিসমাস পোগ্রামে শিশুদের উপহার ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে বড়দিনের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করছে। গির্জার অবকাঠামো উন্নয়ন ও উৎসব আরো সুন্দর করার লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা করছি।
এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, এ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি গির্জা রয়েছে, গির্জার শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে সরকারিভাবে যে বরাদ্দ এসেছে (১ মে.টন চাল), তা দেওয়া হয়েছে।
মিসু সাহা নিক্কন/বার্তা-12-23
0Share