নিজস্ব প্রতিনিধি, কিশোর কুমার দত্ত: ’যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। কবিদের বলা এ দু’টি লাইনের যথার্থতা মিলেছে রামগতি উপজেলার পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকার যে বাড়িটির যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা মেলে গৃহবধূরা গোবরের লাকড়ি ও ঘুঁটে তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের গৃহবধূরা সংসারের কাজের ফাঁকে পাটখড়ি, বাঁশের কঞ্চি অথবা গাছের চিকন ডাল কেটে গোবর ও তুষ একসঙ্গে মিশিয়ে ওই লাঠির সঙ্গে লাগিয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ গোবর ঘেঁটে গোল তাল পাকিয়ে সেগুলো হাতের সাহায্যে গাছের সাথে চ্যাপ্টা করে রোদে দিচ্ছেন।
ওই সব এলাকার অনেক গৃহবধূই গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। শুধু আর্থিক সচ্ছলতাই নয়, পরিবারের রোজকার জ্বালানি সঙ্কটও মেটাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি অতিরিক্ত পচা গোবর জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের খরচ কমিয়ে জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন।
এর সত্যতা মিললো চর হাসান-হোসেন গ্রামের ময়ুরী দেবনাথের কথায়। তিনি বলেন, আমাগে এহানের সগোলেই ঘুঁটে বানায়। আর এ ঘুঁটে নিজেদের জ্বালানি কাজেও লাগায়। আবার বৌ-ঝিরা অনেক সময় এই ঘুঁটে বেইচা অনেকের বাচ্চা-কাচ্চার লেহাপড়ার খরচ যোগায়।
একই গ্রামের বন্দনা দেবনাথ জানায়, এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গোবর কুড়িয়ে এনি। এসব গোবর সারাবছর বড় একটি গর্তে জমা করি। বছরের ডিসেম্ভর-ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত জমানো গোবর দিয়ে তিনি ঘুঁটে বানানো শুরু করেন। এরপর নিজেদের জ্বালানি সঙ্কট মেটান।
রঘুনাথপুর গামের অমূল্য মন্ডল জানান, গোবরের ঘুঁটে বিক্রি করে এলাকার বেকার মহিলা ও গৃহবধূরা পরিবারের উন্নতি করছে। তারও ৪টি গরু রয়েছে। গোবর দিয়ে একদিকে যেমন জ্বালানির চাহিদা মিটিয়ে প্রতি ১০০টি ঘুঁটে ২শ থেকে ২শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন, অন্যদিকে মাটিতে পচিয়ে জৈবসার তৈরি করে পাওয়া যায় অধিক ফলন।
সচেতন মহল বলেন, রামগতিেেত বেশির ভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গার শিকার হয়ে টাঁই নেই পরের জায়গায়। এ অঞ্চলের প্রায় সব বাড়িতেই গরু পোষা হয়। জ্বালানির বিকল্প হিসাবে নারীরা গোবর দিয়ে লাকড়ি বা মুইঠা (ঘুঁটে) তৈরি করেন। এতে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে।
আবার অস্বচ্ছল পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের অনেক স্বচ্ছল পরিবারও রয়েছেন যারা গবাদি পশুপালন করে একদিকে জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছেন, অন্যদিকে উপকুলের নারীরা ঘুঁটে বিক্রি করে ঘোরাচ্ছেন ভাগ্যের চাকা।
0Share