নিজস্ব প্রতিনিধি : সংবাদপত্র কে বলা হয় জ্ঞানের ঘর। দেশে শিক্ষার প্রসার থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই সংবাদপত্রের অবদান অস্বীকার করার মতো নয়। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বিশেষ করে প্রিন্ট সংবাদপত্রের পাঠক কমে যাচ্ছে একেবারে অবিশ্বাস্য গতিতে। পক্ষান্তরে সে পত্রিকারই অনলাইন ভার্সন জনপ্রিয় হচ্ছে।
মে মাসে শেষ ও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কমিউনিটি অনলাইন লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে জেলার মাত্র ১শজন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার পাঠক ও পত্রিকার ৯ জন এজেন্টের মাঝে প্রতীকি জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
জরিপের তথ্য জানার পর জেলার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি এসএম জাহাঙ্গীর বলেন,
লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রিন্ট সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা গত ৬ মাসে যে হারে কমেছে, সে ধারা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে প্রিন্ট সংবাদপত্রের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে।
জেলার সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যার হিসাবে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলায় পত্রিকা বিক্রি করে মোট ৯ টি এজেন্ট। যার মধ্যে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর শহরে ২ জন, মান্দারিতে ১ এবং চন্দ্রগঞ্জে ১জন। রামগঞ্জে ২ জন, রায়পুরে ১ জন, রামগতিতে ১ জন এবং কমলনগরে ১ জন। আবার সংবাদপত্র বিক্রির সাথে জড়িত আছে প্রায় ৫০ জন হকার।
২০১৫ সালে মে মাসের শেষ সপ্তাহে জরিপ চালানোর সময় পুরো লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রিন্ট পত্রিকার প্রিমিয়াম পাঠক পাওয়া যায় প্রায় ৯ হাজার। কিন্তু ২০১৪ সালে সে সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ১১ থেকে ১২ হাজার।
বর্তমানে জেলার সকল এজেন্টেরই পত্রিকা বিক্রি ধারাবাহিক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। জেলার পত্রিকা বিক্রির এজেন্টদের মধ্যে রায়পুর ম্যাগাজিন হাউজের মালিক মোঃ আবু তাহের জানান ২০১৪ সালে তিনি বিক্রি করতেন ২ হাজার ৫শ কপি বর্তমানে বিক্রি করছেন ২ হাজার কপি।
রামগঞ্জ নিউজ কর্নারের মালিক রাজন পাটোয়ারী ২০১৪ সালে বিক্রি করতেন ২ হাজার ৮শ কপি বর্তমানে বিক্রি করছেন ২২শ কপি। রামগঞ্জের অন্য এজেন্ট মের্সাস হারুন রশিদ পাটোয়ারী ২০১৪ সালে তিনি বিক্রি করতেন ৬শ ৫০ কপি বর্তমানে বিক্রি করছেন ৪শ কপি।
রামগতির একমাত্র এজেন্ট মেসার্স মৃনাল কান্তি পাল ২০১৪ সালে তিনি বিক্রি করতেন ৪শ কপি কিন্তু বর্তমানে বিক্রি করছেন ৩শ কপি।
কমলনগরের মেসার্স নুরনবীষ্টোর ২০১৪ সালে বিক্রি করতেন ৪শ ৫০ কপি বর্তমানে সে সংখ্যা ৩শ কপি। সদর উপজেলার মান্দারীর মেসার্স এমজে আলম ২০১৪ সালে ১ হাজার বর্তমানে ৭শ কপি বিক্রি করছেন। চন্দ্রগঞ্জের মেসার্স আলা উদ্দিন ২০১৪ সালে ১৩শ কপি বর্তমানে বিক্রি করছেন মাত্র ৮শ কপি।
উল্লেখিত হিসাব থেকে দেখা যায় ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে প্রায় ২৭% পাঠক প্রিন্ট ভার্সনের পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে ঝুঁকেছেন। প্রতিদিনই পত্রিকার পাঠক কমতি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান বিভিন্ন এজেন্ট।
পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সনের পাঠক কমে যাওয়ার পিছনের কারণ জানতে প্রশ্ন করলে অধিকাংশ পাঠক জানান, ইন্টারনেটে সংবাদ পাঠ করার কারণে তারা এখন আর পত্রিকা কিনে পড়েনা।
অন্যদিকে রামগঞ্জের এজেন্ট হারুন রশিদ পাটোয়ারীর বলেন,
সংবাদপত্রে বর্তমানে আকর্ষনীয় সংবাদ বিশেষ করে রাজনৈতিক সংবাদ কমে যাওয়ায় পাঠক কমে যাচ্ছে। তারমতে এ অঞ্চলের পাঠক রাজনৈতিক সংবাদই সাধারণত বেশি পড়েন।
প্রসঙ্গত এতকাল যে প্রিন্ট সংবাদপত্রের আধিপত্য ছিল সে সংবাদপত্রের ইতিহাস জানতে গিয়ে উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়ার থেকে জানা যায়, চীন দেশে প্রথম সংবাদপত্রের প্রকাশনা শুরু হয়। উপমহাদেশে সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে সর্ব প্রথম হাতে লেখা সংবাদপত্র চালু হলেও ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’ প্রকাশিত হয় ১৭৮০ সালে।
বাংলা ভাষায় প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘সংবাদ প্রভাকর’ প্রকাশিত হয় ১৮৩৯ সালে। আর বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা “রঙ্গপুর র্বাতাবহ” প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালের আগষ্ট মাসে।
0Share