সানা উল্লাহ সানু | চাঁদপুরের দক্ষিণ সীমানা ও লক্ষ্মীপুরের উত্তর সীমনা চর ভৈরবী থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর এবং ভোলা জেলার মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে ব্যাপক হারে জাগছে অসংখ্য ভাসমান ও ডুবোচর। এদের সংখ্যা ১৬টি। চরের কারণে আটকে যাচ্ছে উপকূলের জীবন ও অর্থনীতি।
এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের চার পর্বের প্রতিবেদনের আজ ২য় পর্বে থাকছে, অসংখ্য ডুবোচরে মেঘনায় কমেছে ইলিশ।
প্রথম পর্ব: চরে আটকে যাচ্ছে জীবন ও অর্থনীতি
মতিরহাট ঘাটের মাছের আড়তদার মিছির আহমেদ জানান, বর্তমানে মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিশের জন্য জেলেদেরকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে সাগরে যেতে হচ্ছে। সাগর থেকে ইলিশ এনে জেলেরা নদীর ঘাটে বিক্রি করছে। বর্ষায় নদীতে প্রচুর ইলিশ আসে না। ২০২৩ সালের শীত মৌসুমে মেঘনায় ইলিশ পায়নি জেলেরা। দু’চারটি করে ইলিশ পেলেও তাতে নৌকার জ্বালানি খরচও ওঠে না।
এসময় রাশেদ নামে অপর একজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে গেছে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ। তবে এসময় বিগত বছরগুলোর তুলনায় মেঘনার এ সীমানায় পোয়া ও রিঠা মাছ বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
জেলে সহিজল মাঝি জানায়, মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে, আড়তদার, পাইকার, দাদন ব্যবসায়ী, মৎস্য শ্রমিক ও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের চাপ।
চরের কারণে ইলিশ ধরা না পড়ায় মেঘনাপাড়ের অর্থনীতে পড়ছে ছাপ
নদীতে চরের কারণে ইলিশ কমে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুরের উপকূল এলাকায় অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাংলা বর্ষের জন্য কমলনগরের মতিরহাট, মাতব্বরহাট এবং পাটারিরহাট বাজার ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি।
মতিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও চর কালকিনির ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান লিটন জানান,
মেঘনায় ইলিশ ধরা না পড়ায় এসব বাজারে এখন ক্রেতা ও বিক্রেতা আসে না। তাই বাজার ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি। গত ২-৩ বছর আগেও এ বাজারগুলোতে ৫-৭ লাখ টাকার ইজারা হতো বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪২ হাজার। কিন্ত গত ২ বছর যাবত নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেদের জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান,
জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। সামনে এ অবস্থা চললে মেঘনা ইলিশশূন্য হয়ে যাবে। নদীতে চর পড়ে গেছে এবং পানি কমে গেছে। তাই ইলিশ মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। পানি বাড়লে ইলিশের পরিমাণও বাড়বে।
0Share