সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরের ফরাশগঞ্জ গ্রামের একমাত্র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোমতাজের স্বীকৃতি পেতে কতদিন?

লক্ষ্মীপুরের ফরাশগঞ্জ গ্রামের একমাত্র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোমতাজের স্বীকৃতি পেতে কতদিন?

লক্ষ্মীপুরের ফরাশগঞ্জ গ্রামের একমাত্র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোমতাজের স্বীকৃতি পেতে কতদিন?

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাধীন কুশাখালী ইউনিয়নের ফরাশগঞ্জ গ্রামের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোমতাজ উদ্দিন। এক গ্রামে এই একজনই মুক্তিযোদ্ধা। এই বাবার রণাঙ্গণের বীরত্বগাঁথা কথাগুলো আজও তাঁর সন্তানদের অশ্রুন্সিক্ত করে। বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করে ৫০ বছর পরেও এখনো পায়নি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু। তার ছেলে আরিফ চৌধুরী শুভ বাবার স্মৃতিচারণ করে এমন ক্ষোভের কথা জানান।

আরিফ বাবার কথা বলতে গিয়ে জানান,

বাবা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎক ছিলেন। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে পাকবাহিনীর বুলেট বিদ্ধ হন। বুলেট এসে তার পায়ে পড়ে এক আঙ্গুল ছিড়ে যায়। প্রচার বিমুখ তার বাবা চিকিৎসা সেবায় মনোনিবেশ থাকায় প্রথমে মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় তার নাম অর্ন্তভুক্ত করাননি। পরে আর চেষ্টা করেও নানা প্রতিকুলতার সম্মুখিন হন।  পরে অনেকটা রাগ ক্ষোভ অভিমান আর আক্ষেপ নিয়ে ২০১২ সালে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি মারা যান। এখন আমরা চেষ্টা করে এখনো আলোর মুখ দেখিনি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের ফরাশগঞ্জ গ্রামে একজন মাত্র মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। গ্রামবাসীরা একবাক্যে বলে দেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোমতাজ উদ্দিনের কথা । সমাজ সেবক ও চিকিৎসক হিসেবে কুশাখালী ইউনিয়নে তাঁর বেশ সুনাম রয়েছে।

ফরাশগঞ্জ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক আবু তাহের জানান,

মুক্তিযোদ্ধা ও পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার মোমতাজ উদ্দিন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসক। সে কারণে রাজাকাররা সব সময় তাকে মেরে ফেলার জন্য খোঁজ করতেন। যুদ্ধকালীন সময়ে স্থানীয় মান্দারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজাকার সর্দার ননী মুক্তিযোদ্ধা মমতাজের মাথার বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণা করেন। তাই জীবন বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে রাজাকারদের ভয়ে তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের পোড়াখালী খালের স্রোতে ভেসে গন্ধব্যপুর থেকে পালিয়ে আসেন ফরাশগঞ্জে। জনমানবহীন এই গ্রামে এসে তিঁনি শিক্ষার্থী পড়াতেন ও গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন। ফলে তিনিই এ গ্রামের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা। তবে রাষ্ট্রীয় ভাবে তিনি স্বীকৃতি পাননি। এটা দুঃখজনক।

লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সহকারি কমান্ডার আমির হোসেন মোল্লা বলেন,

মোমতাজ ভাই ছিলেন আমাদের যুদ্ধের তথ্যদাতা । রামগঞ্জ, ফেনী সীমান্তে এবং লক্ষীপুরের বাগবাড়িতে যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদীন এর অধীনে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন ক্যাম্পে তাকে নিয়ে যেত আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করাতেন। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য আজও তাঁর স্বীকৃতি পায়নি তিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক উপজেলা কমান্ডার মাহবুবুল আলম বলেন,

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গ্যাজেটে তার নাম তালিকাভুক্তি করতে পারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। আমরা তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করে প্রত্যয়ন দিয়েছি। চিঠিও পাঠিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও জেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শাহাজান কামাল (এমপি)২০১৬ সালের মার্চ মাসে মমতাজ উদ্দিনকে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন।

পারিবারি সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য ২০১২ সালে তাঁর পরিবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন করেন। ডিজি নং-২০০৬৫। আবেদনের ১০ বছর চলে গেলেও আজও মেলেনি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। একাধিক জাতীয় গণমাধ্যম ও টিভি চ্যানেল তাঁকে নিয়ে কয়েকটি ব্যতিক্রম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্ত ২০১৭ সালের জেলা যাচাই-বাচাই কমিটি তার তার নামটি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের খ তালিকায় প্রেরণ করে।

বিষয়টি জানতে চাইলে সমাজসেবা অফিসের সূত্র জানা যায়, যাচাই-বাচাইয়ের প্রতিবেদনে ৭ সদস্যদের কমিটির মধ্যে ৬জন সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মমতাজ উদ্দিনকে সমর্থন করলেও একজন সদস্য অজ্ঞাত কারণে তাকে কোন মন্তব্য করেন নি। পরবর্তীতে সে সদস্যও মমতাজ উদ্দিনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সমর্থন করে প্রত্যয়ন দেন। কিন্তু সেটি পাঠানোর প্রক্রিয়া না থাকায় তদালিকাভুক্তি থেকে বাদ পড়ছে মুক্তিযোদ্ধা মোমতাজ।

এদিকে বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মন্ত্রণালয়ে ঘুরে ঘুরে হয়রান মুক্তিযোদ্ধা মমতাজের ছেলে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ চৌধুরী শুভ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন,

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের উদ্যোগ কম নয়, কিন্তু আলোর নিচে অন্ধকারের মতো বেঁচে থেকেও আমার বাবা স্বীকৃতিহীন চলে গেছেন পরাপারে। মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাটুকুও তিনি পাননি। আজ স্বীকৃতিটুকু চাই। বাবাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্রের আর কত সময় লাগবে জানি না।

 

প্রতিবেদন আরও সংবাদ

এক মেশিনেই ৮০ রোগের চিকিৎসা দেন রায়পুরের আবু তাহের সিদ্দিক !

লক্ষ্মীপুরের নারী ও কিশোরীদের হাতে তৈরি ৫কোটি টাকার টুপি রপ্তানি হয় মুসলিম বিশ্বে

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | কমেছে ইলিশ; নদীপাড়ের মন্দার প্রভাব

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | চরে আটকে যাচ্ছে জীবন ও অর্থনীতি

লক্ষ্মীপুরে বছরে ১১ কোটি ঘনফুট উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রবাসী স্বামী ওপর জেদ করে কোলের শিশুকে রেখে যান ভিক্ষুকের কোলে; জানিয়েছে শিশুর মা

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com