শুরু হয়েছে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর এবং লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস। সোমবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রিন্স অব রাসেল-৩ নামের একটি লঞ্চ দিয়ে দেশের নতুন এ নৌপথের উদ্বোধন করেন নৌ-ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি ফিতা কেটে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সদরঘাট থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর।
এসময় উপস্থিত ছিলেন লঞ্চের মালিক জামাল হোসেন এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ঢাকা টু লক্ষ্মীপুর লঞ্চ চাই’ পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান, সদস্য আফজাল হোসেন অনিক এবং রেদওয়ান উল্লাহ খান ।
সময় সূচী: প্রাথমিক ভাবে একটি লঞ্চ প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মজুচৌধুরীরহাট ঘাটের উদ্দেশ্যে এবং প্রতিদিন সকাল ৭টায় মজুচৌধুরীরহাট ঘাট থেকে সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করবে । আজ লঞ্চটি চর রমনী মোহন আসার পর মাঝ নদীতে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের সাথে রুট নিয়ে আলোচনা ও দেখানো পথে চলার কারণে সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়নি। তবে আগামী ২দিন পর ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে কত সময় লাগবে তা জানাবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
ভাড়া: লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে প্রাথমিক ভাবে এক সপ্তাহ পরীক্ষামূলক চলাচলের পর ভাড়া নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাত্তার পালোয়ান বলেন, লঞ্চ সার্ভিস চালু জেলার মানুষের প্রাণের দাবি ছিলো। তাদের দাবি পূরণ হয়েছে। এখন লঞ্চটি চালু রাখতে হবে।
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ কেন জরুরী ?
সড়কপথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে লক্ষ্মীপুর শহর পর্যন্ত দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার ( ঢাকা-কুমিল্লা ১০৪ কিমি+কুমিল্লা-চৌমুহনী ৬৪ কিমি+চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর ৩৫ কিমি) । কিন্ত রামগঞ্জ-গৌরিপুর কুমিল্লা হয়ে দূরত্ব ১৪০ কিমি।
নৌপথে এ দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। কিন্তু নৌপথ চালু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এর সুবিধা পাচ্ছে না লক্ষ্মীপুরবাসী। ফলে জেলাবাসীর প্রধান দাবি হয়ে উঠেছে, যত দ্রুত সম্ভব লঞ্চ চালু করা। বর্তমানে চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীর ধরে লক্ষ্মীপুরের বিপুলসংখ্যক জনগণ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। চাঁদপুরের পর রায়পুর হয়ে লক্ষ্মীপুর আসতে সিএনজি সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে বিপুল কষ্ট পায় এবং অর্থ অপচয় হয় সাধারণ মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকার মধ্যকার নৌপথে লঞ্চ চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে জেলার বাসিন্দারা। দুই বছর আগে মজু চৌধুরীর হাটের লঞ্চঘাট থেকে ‘ঢাকা টু লক্ষ্মীপুর’ লঞ্চ চলাচলের দিনক্ষণ ঘোষণা করেও কার্যকর করতে পারেননি তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল। ঢাকা-লক্ষ্মীপুর পথে লঞ্চ চলাচলে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় মেঘনা নদীর নাব্যতা সংকট।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও মেঘনার ওপর দিয়ে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌপথ চালু করা সম্ভব। এটা করা গেলে যাত্রীরা সড়কপথের তুলনায় কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা নৌপথ সচল থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চল ও রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত ২৫ বছর নদী খনন না করায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নদীর তীব্র স্রোতে উপকূলীয় জনপদ ভাঙছে। ভিটামাটিসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা নদীতে তলিয়ে গেছে।
২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করার কথা ছিল। তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য। কিন্তু ওই সময় লঞ্চ চালু করা সম্ভব হয়নি। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ বিআইটিডাব্লিউটিএ চিঠি দিয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এমভি বোগদাদিয়া-৮ লঞ্চ চালুর অনুমতি দেয়। সেখানে বলা হয়, পরীক্ষামূলকভাবে এটি চলবে। এর মধ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে; কিন্তু নাব্যতা সংকটে লঞ্চটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ চাই পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘এ পথে লঞ্চ চালুর জন্য আমরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। একাধিকবার লঞ্চ চালুর তারিখ ঘোষণা করা হলেও নদীর নাব্যতা সংকটে তা ভেস্তে গেছে।’
লক্ষ্মীপুর-ঢাকা নৌপথের মেঘনা নদীর নাব্যতা সংকট নিরসনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পথের লক্ষ্মীপুর অংশে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-লক্ষ্মীপুরে নৌযান চলাচল উন্মুক্ত করতে সদর উপজেলার চর রমনী মোহন থেকে চর মেঘা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে।
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নদী পথে লঞ্চ চালু থাকলে ব্যাবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ লক্ষ্মীপুরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। বলে মনে করে সাধারণ মানুষ।
0Share