১৯৭০, ১২ নভেম্বর এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়কে স্মরণ ও উপকূল দিবসের আয়োজনের অংশ হিসেবে রবিবার উপকূলীয় জেলা বরগুনার শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে জ্বালানো হয়েছে ১০০১ টি মোমবাতি। ১৯৭০ এর বন্যায় নিহতদের স্মরণ ও ১২ নভেম্বর দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনই এই আয়োজনের অন্যতম প্রতিপাদ্য।
এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুভ সুচনা ঘটে এ বছরের উপকূল দিবসের। সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টুর সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় এমন আয়োজনের আয়োজক ছিলেন স্থানীয় সংবাদিক আরিফুর রহমান। জানা যায়, ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বরের প্রলয়ে উপকূলের ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ৫ লাখ। ৭০-এর ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টির নাম ছিল ‘ভোলা সাইক্লোন’।
সেই সব মানুষকে স্মরণ করেই ১২ নভেম্বর দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে পালনের দাবী উঠেছে সমগ্র উপকুল জুড়ে। চলমান বছরে “উপকুল দিবস” পালনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উপকূলীয় ১৬ জেলার মানুষ। তারই অংশ হিসেবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলির নলবুনিয়া শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।
একাধিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরাকারি চাকুরীজিবি, শিক্ষক, সাংবাদিক, বেসরকারি সংস্থার উন্নয়ন কর্মি, স্থানীয় গন্যমান্য ও নানা শ্রেনি পেশার মানুষের উপস্থীতিতে প্রানবন্ত হয়ে ওঠে শুভ সন্ধ্যা বীচের আজকের আয়োজন। বরগুনার শুভ সন্ধ্যা বীচে আজকের আয়োজনের মধ্যে ছিলো আলোচনা সভা, ঘূর্নিঝড়ে প্রয়াতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, ঘুড়ি উড়ানো, ফানুস উড়ানো, আলোক মিছিল ইত্যাদি। আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরগুনার শুভ সন্ধ্যা বীচের আজকের অনুষ্ঠান পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে নানা দিক বিবেচনা করে।
উপকূলীয় মানুষের দুর্যোগ সচেতনতা বাড়াতে আজ আয়োজনে আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া উপকূলীয় শিশুদের বন্যাকালিন ভয় কমিয়ে আনার লক্ষে আয়োজন করা হয় ঘুড়ি উড়ানোর। ১৯৭০ সালে বন্যায় প্রয়তদের আত্বার শান্তি কামনা করে জ্বালানো হয় মোমবাতি। দেশের জাতীয় পর্যায়ের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষনের প্রতীকী আবেদনের অংশ হিসেবে আজকের আয়োজন থেকে ফানুস উড়ানো হয়। এবং ভবিষ্যতে উপকূলীয় মানুষের প্রতি সরকারি নজরদারি বৃদ্ধির কামনায় অনুষ্ঠিত হয় আলোক মিছিল।
১১ নভেম্বর দুপুরের পরেই আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হয়। বিকেল থেকেই উপকূল দিবসের আয়োজনের অংশ হিসেবে শুভ সন্ধ্যা সৈকতে ঘুড়ি উড়ানো শুরু হয়। উপকুলের হাজারো প্রতিবন্ধকতা ও উপকূলীয় মানুষের দুঃক্ষ গাথা জীবনের অবসানে দেশের জাতীয় পর্যায়ের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষনের তাগিদে এমন সব আয়োজন গুরুত্বপুর্ন বলে ভাবছেন স্থানীয় গন্যমান্যরা । উপকূল রক্ষা ও নানা প্রাকৃতিক সংকটে উপকূলের মানূষের সচেতনতা আনায়নে এমন আয়োজনের ব্যাবস্থা করা হয় বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানের আয়োজক ও স্থানীয় সংবাদিক আরিফুর রহমান। এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, উপকূলীয় মানূষের জীবনযাত্রা থমকে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শত ঝুকিতে তারা বেড়ে উঠলেও দুর্যোগ সচেতনতা বৃদ্ধিতে কোণ দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পরছেনা। দুর্যোগ ঝুকিতে উপকূলের মানুষের অসচেতনতা জন্মদিতে পারে নতুন কোন একটি দুর্যোগ বিপর্যয়। তাই জনসচেতনতা আনায়নে এই দিনটিকে (১২ নভেম্বর ১৯৭০) উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ সয়ং সরকারের তরফ থেকে। দিবসটি পালনের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে রাইজিং বিডির উপকূলীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টূর ভূমিকার কথা তুলে ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আরিফ রহমান।
তিনি জানান, ১৯৭০ এর ঘুর্নিঝড়ের ইতিবিত্র অনুসন্ধান করে ১২ নভেম্বর দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে পালনের প্রথম উদ্যোগ গ্রহন করেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টূ। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজ সমগ্র উপকূলে বেসরকারি ও স্থানীয় আয়োজনে হলেও পালিত হচ্ছে উপকূল দিবস। এত দিবসের ভিড়ে উপকূলের জন্য একটি পৃথক দিবস প্রসঙ্গে উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, উপকূলের দিকে গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকদের নজর বাড়িয়ে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটানোই উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য।
এক যুগেরও বেশি ধরে উপকূল নিয়ে নিবিড়ভাবে রিপোর্টিং করতে গিয়ে আমি উপকূল দিবসের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি। উপকূলের জন্য একটি পৃথক দিবস থাকলে উপকূল ভাবনা সবার মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল, সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সকল মহলে উপকূল-ভাবনার সুযোগ বাড়বে। এর মধ্যদিয়ে উপকূল সুরক্ষা এবং সেখানকার নাগরিকেদের অধিকার নিশ্চিত করার পথ সুগম হবে।
0Share