সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর সোমবার , ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরের ক্রীড়াঙ্গন: গ্যালারি আর পিচের আক্ষেপ

লক্ষ্মীপুরের ক্রীড়াঙ্গন: গ্যালারি আর পিচের আক্ষেপ

লক্ষ্মীপুরের ক্রীড়াঙ্গন: গ্যালারি আর পিচের আক্ষেপ

কাজল কায়েস,জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: দীর্ঘ সময় থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়াচর্চায় এগিয়ে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেলা ক্রীড়া অফিস । আর লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে । সে থেকেই ফুটবল, ক্রিকেট, দাবা, হ্যান্ডবল, সাঁতার ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতাসহ সব খেলা এখানে

নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের ক্রীড়াঙ্গনের নানা দিক নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখছেন আমাদের জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক কাজল কায়েস । আজ প্রথম পর্ব: গ্যালারি আর পিচের আক্ষেপ

সবুজে ছেয়ে পুরো মাঠ। অযত্নে ঘাসগুলোর বাড়বাড়ন্ত। ঘাসে ঢাকা পড়েছে মাঠজুড়ে তৈরি হওয়া গর্তগুলো। যদিও ঘাস ছাঁটার একটা মেশিন আছে লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়ামের। এ দিয়ে কাজও হয় কখনোসখনো। তবে নেই মাঠ সমতলের কোনো ইঞ্জিনচালিত রোলার কিংবা মাঠ সংস্কারের যন্ত্রপাতি।

এমনকি নেই একটা ক্রিকেট পিচও! অথচ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলে সুনাম আছে এই জেলার। তেমনি সুনাম আর ঐতিহ্য আছে জেলার ক্রীড়াঙ্গনেরও। স্টেডিয়াম হওয়ার আগে মডেল হাইস্কুল মাঠে বছরজুড়ে থাকত খেলা। জাতীয় দলের ফুটবলাররাও আসতেন নিয়ম করে। মাঠের চারদিকে খেলা উপভোগ করতেন হাজারও দর্শক।

১৯৯৯ সালে স্টেডিয়াম নির্মাণের পর দর্শক-উন্মাদনা বাড়ারই স্বপ্নই দেখছিলেন সবাই। হয়েছে উল্টোটা। স্টেডিয়ামের যে অর্ধেক গ্যালারিই নেই! অর্ধেক গ্যালারি নির্মাণের পর ১৫ বছরেও তৈরি হয়নি বাকিটা। তাই বড়জোর ১০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারেন একসঙ্গে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সবাই। তা ছাড়া শহর থেকে স্টেডিয়ামের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে।

তাই স্টেডিয়ামের ৫০টির মতো দোকানও পরিত্যক্ত। ভাড়া নিতে আগ্রহী নন কেউ। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দীন চৌধুরী নয়নেরও, ‘স্টেডিয়ামের গ্যালারির কাজ যখন হয় তখনো জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম আমি। এরপর ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, কিন্তু বাকি গ্যালারি আর হয়নি। এটা হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুদানের বাইরে আমাদের আয়ের উৎস না থাকাটাও হতাশার।’

লক্ষ্মীপুরের লাহারকান্দি ও বাঞ্ছানগর এলাকায় ১২ একর জমিতে ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয় জেলা স্টেডিয়াম। গ্যালারি নির্মাণের পর স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল ২০০১ সালের জুলাইয়ে। এরপর থেকে সব খেলারই লিগের পাশাপাশি কুচকাওয়াজ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এখানে। তাতে মাঠের হয় বেহাল দশা।

স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের সময় নির্মিত হয়েছিল ৫০ শতাংশ গ্যালারি। বাকি অর্ধেক গ্যালারি হয়নি ১৫ বছরেও। ভিআইপি গ্যালারির টিনগুলোও জরাজীর্ণ। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই স্টেডিয়ামে নেই ক্রিকেট পিচও! অথচ ক্রিকেটে বেশ সুনাম আছে লক্ষ্মীপুরের। অনূর্ধ্ব ১৪ ক্রিকেটে গত দুই বছরের বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন লক্ষ্মীপুর। তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১০ সালেও।

এ বছর অনূর্ধ্ব ১৬ ও ১৮ ক্রিকেটে হয়েছে বিভাগীয় রানার্সআপ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বয়সভিত্তিক দলগুলোতে এই জেলার তিন-চারজন কয়েক বছর ধরেই খেলছেন নিয়মিত। জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন তানজীদ আহমেদ ইমন। ১৯ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে প্রথম বিভাগ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনালে ইন্দিরা রোডকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরেরই রবিউল আলম রানা। সেই জেলায় ক্রিকেট পিচ না থাকাটা হতাশার। ইনডোর বা নেটে অনুশীলনের সুযোগও নেই। তাই হতাশা জানালেন জেলা ক্রিকেট দলের কোচ ও সাবেক ক্রিকেটার মনির হোসেন, ‘ম্যাটে প্র্যাকটিস করে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পিচে পেরে উঠি না আমরা। সবার আগে তাই পিচের দরকার। বৃষ্টিতে অনুশীলনের জন্য দরকার ইনডোর সুবিধাও। এই দুটো জিনিস পেয়ে গেলে চট্টগ্রাম বিভাগে ক্রিকেট পরাশক্তি হয়ে উঠব আমরা।’ ঢাকা ইন্দিরা রোডের লক্ষ্মীপুরের ক্রিকেটার রবিউল আলম রানাও লুকোলেন না নিজের হতাশাটা, ‘ক্রিকেটের কোনো পিচ নেই আমাদের স্টেডিয়ামে। মাটির উপর ম্যাটে খেলে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেকে। মাঠটাও এবদোখেবড়ো। ড্রেসিংরুমের যাচ্ছেতাই হাল। জেলার ক্রিকেটের উন্নয়নে এই অবকাঠামোগুলোর উন্নতি করতে হবে।’

একটা সময় ক্রিকেট লিগ নিয়মিত ছিল এই জেলায়। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর সংগঠকদের ব্যর্থতায় ক্রিকেট এখন অনিয়মিত। ক্রিকেটে প্রথম বিভাগ হয়েছিল সর্বশেষ ২০১১ সালে। বাগবাড়িকে পেছনে ফেলে শিরোপা জিতেছিল হাইফাই ক্রীড়া সংসদ। টুর্নামেন্টটা হয়েছিল ১০ দল নিয়ে। প্রথম বিভাগ না হলেও ২০১৪ সালে হয় জেলা প্রশাসক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সেখানে চ্যাম্পিয়ন লক্ষ্মীপুর ক্লাব। ২০১১ সালে ক্রীড়া সংগঠক মাঈদ উদ্দীন চৌধুরী কামুরুর উদ্যোগে তাঁর বাবার নামে অনুষ্ঠিত হয় মনির উদ্দিন চৌধুরী টুর্নামেন্ট। আইপিএল, বিপিএলের আদলে এর নাম রাখা হয়েছিল মনির উদ্দিন চৌধুরী এলপিএল। অর্থাৎ লক্ষ্মীপুর ক্রিকেট লিগ। ২০ দলের এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন আনন্দমেলা আর রানার্সআপ অস্থায়ী একাদশ।

লক্ষ্মীপুরে ক্রিকেটের পথচলার শুরু সেই সত্তরের দশকে। জগদীশ চন্দ্র শাহ, আনোয়ার হোসেন, আবদুস সোবহান বাবলু, লুৎফর হায়দার ভুলুসহ আরো কয়েকজনের মাধ্যমে খেলাটা চলত এখানে। তবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আনুষ্ঠানিক প্রথম লিগ করে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে। সেই থেকে খেলাটা মোটামুটি নিয়মিত হলেও ২০১১ সালের পর থেকে লিগের অনিয়মিত হয়ে পড়াটা হতাশার। এ নিয়ে জেলার সাবেক ক্রিকেটার ও লক্ষ্মীপুর ক্লাবের সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাজু জানালেন, ‘আমাদের এখানে একসময় লিগে স্পনসর করত উইলস। এখন এগিয়ে এসেছে ম্যাকসনস গ্রুপ। অর্থাৎ স্পনসর আছে। জেলা প্রশাসকও ক্রীড়ামোদী। কিন্তু অভাব উদ্যোগী সংগঠকের। রাজনৈতিক কিছু কারণও আছে। সব মিলিয়েই আসলে পিছিয়ে পড়ছি আমরা।’

ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই এলাকায় প্রচুর লবণ উৎপন্ন হতো। বিদেশে নিয়মিত বিপ্লব হওয়ায় লবণ বিপ্লবই ঘটেছিল যেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় এখানে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি থাকতেন কাফিলাতলী আখড়া ও রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়িতে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখযুদ্ধ করেছিলেন ১৭ বার। এরই স্মৃতি বহন করছে তিনটি স্মৃতিস্তম্ভ, দুটি গণকবর আর একটি গণহত্যাকেন্দ্র।

এমন ঐতিহাসিক জেলার ফুটবলও ছিল ঐতিহ্যময়। জমজমাট কিছু শিল্ড হতো নিয়মিত। এর অন্যতম সত্তরের দশকের মহকুমা প্রশাসক বদরে আলম শিল্ড। দারুণ উত্তেজনা থাকত এই শিল্ড নিয়ে। সমান জনপ্রিয়তা পায় বেলায়েত শিল্ডও। শ্রমিক বিড়ি গোল্ড কাপও সাড়া ফেলেছিল দারুণ। এই টুর্নামেন্টগুলো বন্ধ এখন। এমনকি ২০০৭ সালে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হওয়ার পর লিগ হয়েছিল কেবল ২০০৮ সালে। সাত বছর পর অবশ্য মাঠে গড়িয়েছে আরেকটি ফুটবল লিগ। সেখানে গতবারের চ্যাম্পিয়ন চৌরাস্তার হয়ে খেলছেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়া লক্ষ্মীপুরের একমাত্র ফুটবলার আকবর হোসেন রিদন। জেলার ফুটবল চর্চা নিয়ে তিনি জানালেন, ‘লক্ষ্মীপুরের খেলোয়াড় হয়েও এখানকার লিগে খেলতে পারিনি ২০ বছরের মতো। খেলা না হলে খেলব কিভাবে? তবে এবারের লিগটা বেশ জমজমাট হচ্ছে। ফুটবলার হিসেবে এ ধরনের লিগের প্রত্যাশাই করি। তাহলে উঠে আসবে অনেক তরুণ ফুটবলার।’

জেলা প্রশাসক গোল্ড কাপ অবশ্য নিয়মিত হয় এখানে। চারটি উপজেলার সঙ্গে অংশ নেয় কয়েকটা ক্লাবও। তবে অন্যান্য খেলাগুলোর বেহাল দশা। ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, হকি, সাঁতার নেই বললেই চলে। খেলোয়াড়ের অভাব আর ক্লাবগুলোর অনীহা দায়ী এ জন্য। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে ব্যাপারটা। কিছুদিন আগে বিকেএসপি খেলোয়াড় বাছাই করতে এসেছিল লক্ষ্মীপুরে। ক্রিকেটের জন্য সেখানে এসেছিল ৪০০ জন। ফুটবলে ১৩ জন। অন্যান্য খেলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি কাউকে! অন্যান্য খেলার লিগ নিয়মিত না হওয়াতেই এই হাল।

লক্ষ্মীপুর ক্রীড়াঙ্গনের আরেকটা সমস্যা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তাদের কম বেতন। ক্রিকেট কোচ বেতন পান মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। সচিবের বেতন ছয় হাজার টাকা। অথচ পাশের জেলা নোয়াখালী বা চাঁদপুরের সচিবদের বেতন ১৫ হাজারের মতো। তাই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব লোকমান হোসেন মোল্লার আক্ষেপ, ‘এত অল্প টাকায় সংসার চালানো সত্যিই কঠিন। অন্য জেলার সঙ্গে বেতনের এই বৈষম্য দূর করা উচিত।’

আগামি পর্বে আসছে: ক্রীড়াক্ষেত্রে লক্ষ্মীপুরের উজ্জল মুখ

প্রতিবেদক,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি, কালেরকন্ঠ/ চ্যানেল নাইন

সাহিত্য | সংস্কৃতি আরও সংবাদ

ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ইলেকট্রিক ইলেকট্রনিক্স এন্ড মেশিনারীজ ব্যবসায়ী সোসাইটির বনভোজন

রায়পুর সোসাইটি ইউ কে” এর উদ্যোগে “পিঠা উৎসব ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান

মঞ্চের শতাধিক শিল্পী নিয়ে আলাউদ্দিন সাজু’র নাটক “অন্যরকম খুশি” 

রামগতিতে নীল পোষাকে পাটোয়ারী বংশের ঈদ পুনর্মিলনীতে বংশ রক্ষার প্রত্যয়

বিজয়ের কবিতাগুচ্ছ ‘আমাদের নতুন ভোর’

লক্ষ্মীপুরে ১৩ শিল্পী পেলেন সম্মাননা

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com