আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার লীগ-বিপিএলে গতি ঝড় তুলে এবার সবার আলোচনার কেন্দ্রতে চলে এসেছেন লক্ষ্মীপুরের তরুণ ক্রিকেটার হাসান মাহমুদ। চলতি বিপিএলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৪.১ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পেরেছেন এ তরুণ। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে হয়তো নিজেকেও ছাড়িয়ে যেতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
৪ ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করলেও তিনি অবশ্য রান দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ খরুচে। ওভারপ্রতি রান খরচা করেছেন ৯.৩৫। শুধু গতির কারণেই আলোচনায় এসেছেন প্রতিভাবান এ তরুণ।
সে জন্য কঠিন পরিশ্রম করছেন ঢাকা প্লাটুনের এ পেসার। এক বছর আগে যুব বিশ্বকাপে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পেরেছেন হাসান মাহমুদ।
বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের ফসল হাসান মাহমুদ। শুরু থেকেই তার তার দুরন্ত গতির বোলিংয়ে মুগ্ধ কোচ-নির্বাচকরা। কিন্তু ইনজুরির কারণে নিজেকে প্রমাণ করার জায়গাটা সে অর্থে মিলছিল না। বেশ কয়েকবারই ইনজুরিতে পড়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। গত যুব বিশ্বকাপে ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে ভালোই করেছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো করেছেন।
গতিকে আরও বাড়ানোর চেষ্টায় নিয়মিত অনুশীলন করছেন হাসান।
হাসান বললেন,
‘পেস বোলারদের গতি নিয়ে আসলে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাটাই মূল ব্যাপার। আর সঠিক অনুশীলন, সঠিক খাবার, সঠিক বিশ্রাম, পেস বোলারদের গতি বাড়ায় আসলে। ফলে অনুশীলনটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে শুধু গতির উপরই নির্ভরশীল থাকতে চান না হাসান। পাশাপাশি বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টায় আছেন এ তরুণ, ‘টি-টোয়েন্টিতে (বোলিংয়ে) বৈচিত্র্য আনাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সব সময় জোরে বল করে তো আর বাঁচতে পারবেন না। ব্যাটসম্যান সব বলেই শট মারতে পারবে সহজেই, যদি জোরে বল করেন। এজন্য বৈচিত্র্য আনাটা খুব দরকার।’
তবে হাসানই নয়, তার মতো মেহেদী হাসান রানা, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধও নজর কেড়েছেন। তাই নিজেদের মধ্যে দারুণ একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তবে এ প্রতিযোগিতাটা উপভোগ করছেন এ তরুণ, ‘নিজেদের মধ্যে এটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কয়জন দলের মধ্যে থাকতে পারবে। আমাদের স্কোয়াডেই অনেকে খেলছে নতুন। আমরা যারা এইচপিতে আছি, ওদের মধ্যেও অনেকেই বিপিএলে খেলছে। ফলে আমাদের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ কাজ করছে, সামনে কে এগিয়ে যেতে পারে, কে কার আগে যেতে পারে।’
তবে এখুনি তাদের নিয়ে কিছু ভাবতে নারাজ বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক নান্নু। উদীয়মানদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে কোন ইয়াংস্টারের কাজ হলো তাকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে যেন ১৫ বছর টানা স্ট্যান্ডার্ড ক্রিকেট খেলতে পারে। একটি বা দুটি ম্যাচ দিয়ে একজন ক্রিকেটারকে বিবেচনা করা যায় না।
একজন ক্রিকেটারের ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৫ বছরের একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য অন্তত ১০ বছরের একটা লক্ষ্য স্থির করতে হবে। সে যেন একবার দলে ঢুকলে দশ বছর দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। সুতরাং একটি, দুটি ম্যাচ দেখে, একটি বল করে বা দুর্দান্ত ডেলিভারি দিয়ে একজন ক্রিকেটারকে বিবেচনা করা যায় না।’
এমনটা বলেছেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক ও জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও।
হাসান মাহমুদ:
লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের পৌর ৭নং ওয়ার্ডের বাঞ্চানগরের মমিন ভেন্ডার বাড়ির মো. ফারুকের ছেলে হাসান মাহমুদ রাব্বি। জন্ম ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর। বাবা ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। হাসান মাহমুদের ক্রিকেট খেলায় হাতে খড়ি বিসিবির কোচ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা লক্ষ্মীপুরের কর্মকর্তা মো. মনির হোসেনের কাছে।
হাসান মাহমুদ
২০১২ সালে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় জেলা ক্রিকেট একাডেমী ভর্তি হয়। ২০১৩ সালে বিসিবি আয়োজিত জেলা অনুর্ধ্ব-১৪ দলে বান্দরবানে বিভাগীয় পর্যায়ে রাঙামাটি বনাম লক্ষ্মীপুর তার অভিষেক ম্যাচ। ২০১৪ তে জেলা অনুর্ধ্ব-১৪তে খেলেছেন। বিভাগীয় পর্যায় থেকে ডাক পেয়েছে কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে এবং ময়মনসিংহে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলে জাতীয় পর্যায়ে বিসিবির বাচাইকারী কর্মকর্তাদের নজর কাড়ে।
২০১৫ সালে জাতীয় অনুর্ধ্ব-১৫তে খেলার সুযোগ পায়। তখনই বাংলাদেশ হয়ে ভারতের সঙ্গে খেলে ১৫ ওভার বল করে ১৮রান দিয়ে ৩ উইকেট ছিনিয়ে নেয় এবং বাংলাদেশ টিম জয়লাভ করে।
২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুর থেকে রাঙামাটিতে খেলে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ প্রাথমিক স্কোয়াডে খেলার সুযোগ পায় এবং বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্টে চান্স পায়। ওখানে গিয়ে ২০১৭ তে এশিয়া কাপ অনুর্ধ্ব-১৯ মালেশিয়া খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলতে পারেনি।
২০১৮ শুরুর দিকে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে লড়ছে। তার বোলিং স্পিড ১৪১ কিলোমিটার। যা জাতীয় দলে খেলুড়ে কোন বোলারের ছিলনা।
হাসানের লক্ষ্মীপুরের কোচ মনির হোসেন বলেন, বিদেশের মাটিতে সত্যিকার অর্থে হাসান কেবল তার মা-বাবা, আমাদের ও লক্ষ্মীপুরবাসীর মুখকে উজ্জ্বল করেনি, হাসান পুরো বাংলাদেশকে আলোকিত করে চলেছে। ও যখন খেলে তার খেলা টেলিভিশনের পর্দায় দেখলে বুকটা ভরে যায়।
হাসান সম্পর্কে মা মাহমুদা খাতুন রানী ও বাবা বলেন, “ওর সাথে আরো মায়ের যেসব সন্তাররা খেলছেন তাদের জন্য দোয়া করি তারাও যেন ভালো কিছু করে দেশের জন্য। আমরা স্বপ্ন দেখি, হাসান দ্রুতই জাতীয় দলে চান্স পাবে এবং সে বিশ্বের বুকে শুধু লক্ষ্মীপুর নয়, পুরো দেশকে আলোকিত করবে।
0Share