বাংলাদেশের মাশরাফি মুর্তজা এবং শোয়েব আখতারের বোলিংয়ের প্রেমে পড়েই পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন হাসান মাহমুদ। ১৯৯৯ সালে লক্ষ্মীপুর জন্ম নেওয়া হাসানের ক্রিকেটের ‘জল পড়েছে, পাতা নড়েছে’ ২০১২ সালে লক্ষ্মীপুর ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন করে। সেই হাসান ৮ বছরের মাথায় ঢুকে গেলেন জাতীয় দলে। বিপিএলে গতির ঝড় তুলে মুগ্ধ করেছেন নির্বাচকদের। আগামী ২৩ জানুয়ারি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছেন ২০ বছর বয়সী পেসার।
বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত হাসান। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরও যেন ছিলেন ঘোরের মধ্যে, ‘সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না যে জাতীয় দলে সুযোগ হয়েছে। এত আনন্দ হচ্ছে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’ তবে এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যাপি খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর জেলার পাঠকদের জন্য হাসানের প্রথম খবরটি দেয় লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর। এরপর সামাজিক মাধ্যম হয়ে এটি এখন পুরো জেলায়।
বিপিএল শেষ করে নির্ভার সময় কাটাচ্ছিলেন, হঠাৎই জাতীয় দলে ডাক এলো হাসানের। তার নিজের চেয়েও পরিবারের আনন্দ যেন আরও বেশি, ‘বাসার সবাই আমার চেয়েও বেশি খুশি। তাদের খুশি দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো। আমি নির্বাক হয়ে গেছি। অনুভূতিটা সত্যিই অন্যরকম।’
২০১২ সালে স্থানীয় কোচ মনিরের তত্ত্বাবধানে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হাসানের। ২০১৩ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলার সুযোগ পান। ধারাবাহিকভাবে বয়সভিত্তিক দলগুলো পেরিয়ে ২০১৭ সালে ঢুকে পড়েন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। ২০১৮ সালে খেলেছেন নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও। গত দুই বছরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও বিপিএল আরও পরিণত করেছে তাকে। সদ্যই শেষ হওয়া বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী না হলেও তুলেছেন গতির ঝড়। ১৩ ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া পেসার ঘণ্টায় ১৪২.৪০ কিমি গতিতেও বোলিং করেছেন।
ছোটবেলায় পাকিস্তানি ফাস্টবোলার শোয়েব আখতারের বোলিং দেখে হাসানের পেসার হয়ে ওঠা। শোয়েব আখতারের গতিময় বোলিং দেখেই আমার পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরু। টিভিতে তার বোলিং দেখে মনে হতো, আমিও যদি অত জোরে বল করতে পারতাম, ব্যাটসম্যানের স্টাম্প উপড়ে দিতে পারতাম।’
যাদের অবদানে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন, সবার কথাই এই শুভক্ষণে মনে পড়ছে হাসানের, ‘আমার যারা কোচ ছিলেন স্থানীয় পর্যায়ে এবং জাতীয় পর্যায়ে, আমার পরিবার, আমার শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুদের কথা মনে পড়ছে। লক্ষ্মীপুরে আমাকে যারা কোচিং করিয়েছেন, বিভাগীয় পর্যায়ে যারা কোচিং করিয়েছেন তাদের সবার বদৌলতেই আমি আজ এই পর্যায়ে এসেছি। চেষ্টা করব সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে।’
বিপিএল চলাকালেই হাসানকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। নির্বাচক থেকে শুরু করে স্বয়ং বোর্ড সভাপতি পর্যন্ত হাসানের বোলিংয়ের প্রশংসা করছিলেন। হাসান নাকি সেসবের কিছুই জানতেন না, ‘এত কিছু জানি না। শুধু ভেবেছি বিপিএলটা ভালো হোক। জাতীয় দলে জায়গা পাবো এমন কিছু ভেবে বিপিএলে খেলতে নামিনি। আমার চিন্তা ছিল ভালো করব। বিপিএলটা ভালো হওয়ার কারণেই হয়তো সুযোগ মিলেছে।’
জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন বলে এখনই অনেক কিছু পরিকল্পনা করবেন- হাসানের স্বভাবটা এমন নয়। মানসিক শক্তি বাড়িয়ে নির্ভার থেকেই সময়টাকে উপভোগ করতে চান তিনি, ‘কিছু ভাবতে চাই না। কেবল সময়টা উপভোগ করতে চাই। পাকিস্তান গিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মিটিং হবে। আমার দায়িত্ব কী সে ব্যাপারে আমি জানবো। আমাকে নেওয়ার পেছনে হয়তো নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা আছে। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার। আমি জানি জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যত সহজ, অনেক বেশি কঠিন সেখানে টিকে থাকা। তবে এটুকু বলতে পারি, বিপিএলে যেমন ভালো করার চেষ্টা করেছি জাতীয় দলেও তেমন চেষ্টা থাকবে। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলব।’
এবারের বিপিএলে মাশরাফির দলে খেলেছেন। প্রিয় ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলে শিখেছেন অনেক কিছু, ‘ছোটবেলা থেকেই তো মাশরাফি ভাইয়ের ভক্ত আমি। এবার তার সঙ্গে খেলেছি। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। মাশরাফি ভাই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে সেগুলো আমার কাজে লাগবে। তবে গতির সঙ্গে আমি কখনোই আপস করবো না। আমার গায়ে যত শক্তি আছে তা দিয়ে জোরে বল করতে চাই।’
আরেক প্রিয় ক্রিকেটার শোয়েব আখতারের দেশে যাচ্ছেন। সুযোগ হলে তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে আছে হাসানের, ‘খুব ভালো লাগছে। ওনার (শোয়েব আখতার) গতি দেখেই আমার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। দেখা হলে তার কাছ থেকে টিপসও নেবো।’
0Share